SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - অম্ল, ক্ষারক ও লবণ | NCTB BOOK

কাজ : অম্ল কী তা জানা

প্রয়োজনীয় উপকরণ : লেবুর রস, লিটমাস পেপার, বিকার, চিমটা

পদ্ধতি : টেস্টটিউবে ২-৩ মিলিলিটার লেবুর রস নাও। প্রথমে চিমটা দিয়ে লাল লিটমাস কাগজ বিকারে নেওয়া লেবুর রসে ডুবাও। কাগজের রং কি পরিবর্তন হলো ? না, হলো না। এবার নীল লিটমাস কাগজ লেবুর রসে ডুবাও। এখন কি লিটমাস কাগজের রং পরিবর্তন হলো ? হ্যাঁ, লিটমাস কাগজের রং নীল থেকে লাল হয়ে গেল।

তোমরা কি জানো এর কারণ কী? লিটমাস কাগজ তৈরি করা হয় সাধারণ কাগজে লাইকেন (Lichens) নামক এক ধরনের গাছ থেকে প্রাপ্ত রঙের সাহায্যে। এভাবে প্রাপ্ত লিটমাস কাগজ দেখতে লালবর্ণের হয়। এ লালবর্ণের লিটমাস কাগজকে যেকোনো ক্ষারীয় দ্রবণে ডুবালে তা নীলবর্ণ ধারণ করে। অন্যদিকে নীলবর্ণের লিটমাস কাগজে কোনো এসিড যোগ করলে তা লাল বর্ণের লিটমাস কাগজে পরিণত হয়।

কাজ : লেবুর রসের বদলে তোমরা নিজেদের মধ্যে দল করে ভিনেগার, কামরাঙ্গা, কমলার রস ইত্যাদি নিয়ে লাল ও নীল লিটমাস কাগজ দিয়ে পরীক্ষা করে রং পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করো ।

তাহলে একথা বলা যায় যে, এসিডের একটি ধর্ম হলো এরা নীল লিটমাসকে লাল করে।

তোমরা কি জানো, লেবুর রসের মতো আমলকি, করমচা, কামরাঙ্গা, বাতাবি লেবু, আঙুর ইত্যাদি টক লাগে কেন? কারণ হলো এই ফলগুলোতে নানা রকম এসিড থাকে। অর্থাৎ এটা বলা যায় যে, এসিডসমূহ টক স্বাদযুক্ত হয়। নিচের টেবিলে বেশ কিছু ফল ও এতে উপস্থিত এসিডের নাম দেওয়া হলো।

ফলের নামউপস্থিত এসিড
আঙুর, কমলা, লেবুসাইট্রিক এসিড
তেঁতুলটারটারিক এসিড
টমেটোঅক্সালিক এসিড
আমলকিএসকরবিক এসিড
আপেল, আনারসম্যালিক এসিড

 

কাজ : ক্ষারক সম্পর্কে জানা

প্রয়োজনীয় উপকরণ : চুন, বিকার, পানি, লাল ও নীল লিটমাস কাগজ, হাতমোজা, নাড়ানি, চামচ, ড্রপার, চিমটা 

পদ্ধতি : হাতমোজা পরে চামচ দিয়ে ৫-১০ গ্রাম চুন বিকারে নাও। এবার ড্রপার দিয়ে আস্তে আস্তে ১০০ মিলিলিটার পানি যোগ করো। নাড়ানি দিয়ে ভালোভাবে নাড়া দাও। এরপর ১০ মিনিট মিশ্রণটিকে রেখে দাও। সতর্কতার সাথে মিশ্রণের উপরিভাগ থেকে পরিষ্কার দ্রবণ আলাদা করে নাও। এই পরিষ্কার দ্রবণটিই হলো চুনের পানি। এখন চুনের পানিতে চিমটা দিয়ে লাল ও নীল লিটমাস কাগজ ডুবাও। লিটমাস কাগজের রং কি পরিবর্তন হলো?

হ্যাঁ, লাল লিটমাস কাগজের রং পরিবর্তিত হয়ে নীল হয়ে গেল আর নীল লিটমাসের রং পরিবর্তন হলো না। পরবর্তীতে তোমরা রং পরিবর্তনের কারণ আরও বিশদভাবে জানতে পারবে।

চুনের পানিতে থাকা Ca(OH)2 এর মতো যে সকল রাসায়নিক পদার্থ লাল লিটমাস কাগজকে নীল করে তাদেরকে আমরা ক্ষারক বলি। সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড (NaOH) একটি ক্ষারক যা সাবান তৈরির একটি মূল উপাদান। এটি কাগজ ও রেয়ন শিল্পেও ব্যবহৃত হয়।

নির্দেশক : তোমরা উপরে যে লিটমাস কাগজ ব্যবহার করলে তা নিজের রং পরিবর্তনের মাধ্যমে কোনো একটি পদার্থ অম্ল না ক্ষারক তা নির্দেশ করল। লিটমাস কাগজ এর মতো যেসব পদার্থ নিজেদের রং পরিবর্তনের মাধ্যমে কোনো একটি বস্তু অম্ল না ক্ষার বা কোনোটিই নয় তা নির্দেশ করে তাদেরকে নির্দেশক বলে। লিটমাস কাগজের মতো মিথাইল অরেঞ্জ, ফেনোফথ্যালিন, মিথাইল রেড এগুলো নানা রকমের নির্দেশক যা একটি অজানা পদার্থ এসিড, ক্ষারক না নিরপেক্ষ তা বুঝতে সাহায্য করে।

এসিড : আমরা কয়েকটি এসিডের সংকেত লক্ষ করি। ভিনেগার বা এসিটিক এসিড (CH3COOH), অক্সালিক এসিড (HOOC-COOH), হাইড্রোক্লোরিক এসিড (HCI), সালফিউরিক এসিড (H2SO4)। এই সবগুলো এসিডের মিল কোথায়?

এদের সবগুলোতেই এক বা একাধিক H পরমাণু আছে এবং এরা সবাই পানিতে হাইড্রোজেন আয়ন (H+) তৈরি করে। তাহলে বলা যায় যে, এসিড হলো ঐ সকল রাসায়নিক পদার্থ যাদের মধ্যে এক বা একাধিক হাইড্রোজেন পরমাণু থাকে এবং যারা পানিতে H+ উৎপন্ন করে।

মিথেন (CH4) কি এসিড
এটি এসিড নয়। মিথেনে ৪টি H পরমাণু আছে, কিন্তু মিথেন পানিতে H+ উৎপন্ন করে না। এবার দুটি ক্ষারকের দিকে লক্ষ করি। সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaOH) এবং ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড [Ca(OH)2] ।

ক্ষারক হলো সেই সকল রাসায়নিক পদার্থ যাদের মধ্যে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন পরমাণু থাকে এবং যারা পানিতে হাইড্রোক্সিল আয়ন () তৈরি করে।

তবে কিছু কিছু রাসায়নিক পদার্থ, যেমন- ক্যালসিয়াম অক্সাইড বা চুন, অ্যামোনিয়া (NH3), যাদের মধ্যে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন দু'ধরনের পরমাণু নেই, কিন্তু এরা পানিতে OH- তৈরি করে, এদেরকেও ক্ষারক বলা হয়।

ক্ষারক : তোমরা এর আগে জেনেছ যে, ক্ষারক হলো মূলত ধাতব অক্সাইড বা হাইড্রোক্সাইড। কিছু কিছু ক্ষারক আছে যারা পানিতে দ্রবীভূত হয় আর কিছু আছে যারা দ্রবীভূত হয় না। যে সমস্ত ক্ষারক পানিতে দ্রবীভূত হয় তাদেরকে ক্ষার বলে। তাহলে ক্ষার হলো বিশেষ ধরনের ক্ষারক। NaOH, Ca(OH) 2NH OH এগুলো ক্ষার। এগুলোকে কিন্তু ক্ষারকও বলা যায়। পক্ষান্তরে অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইড [Al(OH)3] কিন্তু পানিতে দ্রবীভূত হয় না। তাই এটি একটি ক্ষারক হলেও ক্ষার নয়। অতএব একথা বলা যায় যে, সকল ক্ষার ক্ষারক হলেও সকল ক্ষারক কিন্তু ক্ষার নয়।

তোমরা সবাই জানো যে, সাবান স্পর্শ করলে পিচ্ছিল মনে হয়। এর কারণ হলো সাবানে ক্ষার থাকে। তাহলে বলা যায় যে, ক্ষার ও ক্ষারকের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এরা পিচ্ছিল হয়। আবার দেখা গেছে যে ক্ষার ও ক্ষারকসমূহ সাধারণত কটু স্বাদযুক্ত হয়। উল্লেখ্য ক্ষারকের স্বাদ পরীক্ষা না করাই ভালো।

Content added || updated By