SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

On This Page
ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - হিন্দু ধর্ম শিক্ষা - দ্বিতীয় অধ্যায় | NCTB BOOK

এই যে ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে থাকা, এটা এক প্রকার যোগাসন। এসো, এখন আমরা বিভিন্ন রকমের যোগাসন এবং এ যোগাসনগুলো কীভাবে করতে হয় সে সম্বন্ধে আরো জানি।

ঈশ্বর আরাধনার একটি পদ্ধতি হচ্ছে যোগ। সাধারণভাবে 'যোগ' শব্দের অর্থ হচ্ছে কোনো কিছুর সঙ্গে কিছু যুক্ত করা তবে ধর্ম অনুশীলনের ক্ষেত্রে যোগ বলতে বোঝায় ভগবানের প্রতি মনঃসংযোগ করা। আসন হচ্ছে যোগের একটি অঙ্গ। যোগ অভ্যাস করার জন্য যেভাবে শরীরকে রাখলে শরীর স্থির থাকে অথচ কোনো কষ্টের কারণ ঘটে না, তাকে যোগাসন বলে। যোগাসন অনুশীলনে কতগুলো সাধারণ নিয়ম মেনে চলতে হয়। তবেই এর সুফল পাওয়া যায়। নিয়মিত যোগাসন অনুশীলনে দেহকে বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে রাখা যায়। ফলে শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ, সবল ও সুন্দর হয়ে ওঠে। মন হয়ে ওঠে আনন্দ ও শান্তিময়। সকল কাজে মনঃসংযোগ ঘটে।

আরাধনার ক্ষেত্রে দেহ এবং মন উভয়েরই গুরুত্ব রয়েছে। দেহকে আশ্রয় করে ধর্ম সাধনা অগ্রসর হয়। তাই দেহকে সুস্থ রাখা সাধনার পূর্বশর্ত। আর যোগাসন হচ্ছে দেহ ও মনকে সুস্থ রাখার একটি প্রক্রিয়া। সেজনা প্রাচীনকালে মুনি-ঋষিগণ শরীর ও মনকে সুস্থ রাখার উপায় হিসেবে যোগাসন অনুশীলনের বিধান দিয়ে গেছেন। যোগাসনের সংখ্যা অনেক, যেমন- পদ্মাসন, শরাসন, সিদ্ধাসন, গোমুখাসন, সর্বাঙ্গাসন ইত্যাদি।

প্রতিটি কাজেরই কিছু নিয়ম-কানুন থাকে। ঠিক তেমনি যোগাসন অনুশীলনেরও কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে। যেমন-সকাল ও সন্ধ্যায় নির্দিষ্ট সময়ে যোগাসন অনুশীলন করতে হয়। ভরা পেটে কিংবা একেবারে খালি পেটে আসন অনুশীলন করা অনুচিত। নরম বিছানার ওপর আসন অনুশীলন করা ঠিক নয়। আসন করার সময় ঢিলেঢালা হালকা পোশাক পরা উচিত। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হয়। নিয়ম অনুসারে প্রত্যেকটি আসন অনুশীলন করার পর শবাসনে বিশ্রাম নিতে হয়।

 

যোগাসনের গুরুত্ব

নিয়মিত যোগাসনে দেহ সুস্থ থাকে। দেহে স্থিরতা আসে। আসন হলো দেহভঙ্গি। এ দেহভঙ্গিতে দেহের প্রতিটি পেশি, স্নায়ু ও গ্রন্থির ব্যায়াম হয়। দেহ-মনের কর্মতৎপরতা ও জীবনী শক্তি বৃদ্ধি পায়। দেহের গঠন সুন্দর ও উজ্জ্বল হয়। দেহের রক্ত প্রবাহ বিশুদ্ধ হয়। দেহের মেদ কমাতে, শীর্ণতা দূর করতে যোগাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যোগাসন দেহের ক্লান্তি দূর করে। মনের চঞ্চলতা দূর করে। যোগাসন অনুশীলনে আধ্যাত্মসাধনায়। নিজেকে নিয়োজিত করা যায়।

বিভিন্ন আসনের মধ্যে আমরা এখন পদ্মাসন ও শবাসন সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।

 

পদ্মাসন

আমরা একটি সুন্দর আসনের কথা জানব। এ আসনটি দেখলে মনে হবে যেন একটি পদ্মফুল ফুটে আছে। অর্থাৎ আসনটি দেখতে পদ্মের মতো। তাই এ আসনের নাম পদ্মাসন।

পদ্মাসনের নিয়ম :

কোনো সমতল স্থানে দুই পা সামনে ছড়িয়ে বসতে হবে। তারপর ডান পা হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙে বাম জানুর ওপর রাখতে হবে। আবার বাম পা ভেঙে ডান জানুর ওপর রাখতে হবে। দুই পায়ের গোড়ালি তলপেটের সঙ্গে মিশে থাকবে। দুই হাঁটুও মিশে থাকবে বসার জায়গার সঙ্গে। দেখতে হবে হাঁটু যেন উঁচু না হয়। সোজা হয়ে বসতে হবে। মাথা, ঘাড় এবং মেরুদণ্ড সোজা থাকবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। এক মিনিট বসে থাকার পর পা ছড়িয়ে দিতে হবে। এরপর আবার পা পরিবর্তন করে বসতে হবে। অর্থাৎ বাম পা জ্ঞান জানুর ওপর রাখতে হবে। এভাবে প্রতিবারে এক মিনিট করে প্রথম দিকে তিন-চারবার অভ্যাস করতে হবে। প্রতিবার অভ্যাসের পর পনের সেকেন্ড শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে।

 

উপকারিতা :

এতে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। দীর্ঘজীবন লাভ করা যায়। মনঃসংযোগ ও একাগ্রতা বাড়ে। শিক্ষার্থীদের জন্য পদ্মাসন খুবই উপকারী।

 

 শবাসন

আমরা একটা মজার আসন শিক্ষক। আসনটির নাম শুনলে একটু কেমন কেমন লাগবে। কিন্তু চিন্তার কোনো কারণ নেই। আসনটির নাম শরাসন। আসনটিতে শবের মতো হয়ে শুয়ে থাকতে হয়। অর্থাৎ মরার মতো শুয়ে থাকতে হয়। তাই এর নাম শবাসন।

শবাসনের নিয়ম :

কোনো শক্ত জায়গায় চিত হয়ে শুয়ে পা দুটি লম্বা করে ছড়িয়ে দিতে হবে। পা দুটোর মাঝে এক ফুট থেকে দেড় ফুটের মতো ফাঁক থাকবে। পায়ের গোড়ালি ভিতরের দিকে থাকবে। আঙুলগুলো থাকবে বাইরের দিকে। হাত দুটো লম্বালম্বিভাবে শরীরের দু-পাশে উরু থেকে একটু দূরে রাখতে হবে। হাতের পাতা আধমুঠো অবস্থায় থাকবে। কোনো শত্রুভাব যেন না থাকে। এবার ধীরে ধীরে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস গ্রহণ ও আগ করতে হবে। এই আসনটি একসঙ্গে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত অনুশীলন করতে হয়। আধঘণ্টা হলে আরও ভালো হয়। তবে দৈনিক যোগাভ্যাসে অন্য কোনো আসনের পর এই আসন অন্ততঃ ৫ থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত করা উচিত।

 

উপকারিতা :

শবাসন অনুশীলনে শরীরের সব ক্লান্তি দূর হয়। মন শান্ত থাকে। শরীর সুস্থ ও সবল হয়। মাংসপেশি ও স্নায়ু শিথিল হয়। শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। অনেক পরিশ্রম ও পড়াশোনার পর শবাসন করলে খুব উপকার হয়।

 

যোগাসনের নিয়মগুলো এবং কেন করতে হবে সে কারণগুলো লেখ।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

 

Content added By

Promotion