SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যেমন- জাপান, আমেরিকা, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহে চিংড়ির সিস্টেমেটিক শ্রেণিবদ্ধতার ওপর ব্যাপক কাজ হয়েছে এবং নতুন নতুন চিংড়ি প্রজাতি শনাক্তকরণের কাজ এগিয়ে চলেছে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশে চিংড়ির সিস্টেমেটিক শ্রেণিবদ্ধকরণের উপর গবেষণা শুরু হয় ১৯৫৭ সালে। বাংলাদেশের মিঠাপানিতে ২৪টি ও লোনাপানিতে ৩৬টিসহ মোট ৬০টি প্রজাতির চিংড়ি পাওয়া গেলেও সারা বিশ্বে ৩৫১ প্রজাতির চিংড়ি পাওয়া যায় বলে প্রাপ্ত তথ্যে প্রতীয়মান হয়। মিঠাপানির চিংড়ি বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ জলাশয় যেমন- পুকুর-ডোবা, দিঘী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড় ও নদীতে এবং লোনাপানির চিংড়ি খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও কক্সবাজার জেলায় সাগরের লোনাপানি ও উপকূলীয় অঞ্চলের ঈষৎ লবণাক্ত পানিতে পাওয়া যায়।

বাগদা চিংড়ির বহিঃঅঙ্গসংস্থান গলদা চিংড়ির অনুরূপ। তবে বাগদা চিংড়ির প্রথম ৩টি এবং পলদা চিংড়ির প্রথম ২টি বড় বক্ষ উপাঙ্গ চিলেটে রুপান্তিরিত হয় এবং গলদা চিংড়ির বহিঃকঙ্কালের ২য় উদর খন্ডকের প্লিউরার মত বাগদা চিংড়ির ২য় উদর খন্ডকের প্লিউরা ১ম ও ৩য় উদর খন্ডকের প্রিউরাকে আবৃত করে না। তাছাড়া গলদা চিংড়ির তুলনায় বাগদা চিংড়ির শিরোবক্ষ অঞ্চল তুলনামূলকভাবে উদর অঞ্চলের চেয়ে ছোট।

চিংড়ির বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য, অভ্যন্তরীণ অঙ্গের বৈশিষ্ট্য, স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য, খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাসের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি শনাক্ত করা হয়।

 

চিংড়ির শ্রেণিবিন্যাস

সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রাণীকে একটি স্বাভাবিক নিয়মে কতকগুলো স্তরে সাজানোর এক নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিকে শ্রেণিবিন্যাস বলে। চিংড়ির শ্রেণিবিন্যাসের ফলে বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি শনাক্তকরণ, প্রজাতি বিন্যস্তকরণ ও অন্যান্য প্রাণীর সাথে জাতিগত সম্পর্ক নিরুপণ করা যায়। চিংড়ি প্রজাতিগুলোকে সাধারণত দু'ভাবে ভাগ করা যায়, যথা- পিনাইড (penacid) ও পিনাইড বহির্ভূত (non-penacid)। এই দুই দলভুক্ত চিংড়িকে সহজেই শনাক্ত করা যায়। পিনাইড বহির্ভূত চিংড়ির বহিঃকঙ্কাল-এর ২য় প্লিউরা ১ম ও ৩য় প্লিউরাকে আংশিক ঢেকে রাখে। কিন্তু পিনাইড দলভুক্ত চিংড়িতে এ ধরনের বৈশিষ্ট্য দেখা যায় না। তাছাড়া পিনাইড চিংড়ির ১ম তিনটি বক্ষ উপাঙ্গ এবং পিনাইড বহির্ভূত চিংড়ির ১ম দুইটি বক্ষ উপাঙ্গ চিলেটে রুপান্তরিত হয়। পিনাইড পুরুষ চিংড়িতে জননাঙ্গ পেটাসমা এবং স্ত্রী চিংড়িতে জননাঙ্গ থেলিকাম বিদ্যমান থাকে। পিনাইড বহির্ভূত স্ত্রী চিংড়িগুলো গুচ্ছকার ডিমগুলো প্লিওপডদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে বহন করে থাকে কিন্তু স্ত্রী পিনাইড চিংড়ি ডিম সরাসরি পানিতে ছাড়ে।

চিংড়ি আর্থোপোডা পর্বের ক্রাস্টেসিয়া শ্রেণির ডেকাপোডা পর্বের অন্তর্ভুক্ত প্রাণী। এই বর্গের কিছু চিংড়ি মিঠাপানিতে এবং কিছু চিংড়ি লোনা পানিতে বাস করে। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ চিংড়িকে সাধারণ পিনাইটি, পেলিমনিডি, প্যানডেলিডি, হিপোলিটিডি, এলফিডি ও সারপেটিডি এই ৬টি গোত্রে ভাগ করা যায়। বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাগদা ও গলদা চিংড়ির শ্রেণিবিন্যাস হলো:

পর্ব (Phylum) : আর্থোপোডা (Arthropoda)
শ্রেণি (Class)  : ফ্রাস্টেসিয়া (Crustacea)
বর্গ (Order) : 

১. পিনাইডি (Penaeidae)

২. পেলিমনিডি (Palaemonidae)

গণ (Genus)

১. পিনিয়াস (Penaeus)

২. ম্যাক্রোগ্রাকিয়াম (Macrobrachium)

প্রজাতি (Species)

১. বাগদা (Penaeus monodon)
২. গলদা (Macrobrachium rosenbergii)

 

বাগদা চিংড়ির বাহ্যিক গঠন

এদের দেহ, দ্বিপার্শ্বীয়, লম্বাকৃতি, প্রভিসন ও বঞ্চিত। দেহ মস্তক ও উদরে বিভক্ত। চিংড়ির মাথাকে দেহ থেকে আলাদা করা হয় না বলে মাথা ও বুককে একসঙ্গে বলা হয় শিরোবক বা সেফালোথোরাঙ্গ (cephalothorax)। উদর (abdomen) ক্রমান্বয়ে পিছনের দিকে শুরু হয়ে লেজ (telson) এর সাথে মিশেছে। 

চিত্র-১.১৩ : বাগদা চিংড়ির বাহ্যিক অঙ্গসমূহ 

শিরোক্ষে ১৩টি ও উদরে ৬টি উপাঙ্গ আছে। চিংড়ির দেহ কাইটিন নামক খোলস দিয়ে আবৃত, যা ক্যালসিয়াম উপাদান দিয়ে গঠিত। মস্তকের সম্মুখভাগে করাতের ন্যায় কাইটিন আবরণকে রোম্মাম (rostrum) বলে।

চিংড়ির খোলস দেহের প্রতিটি অংশকে ঘিরে রাখে এবং একটি খোলস অপর খোলসের সাথে সন্ধিল পর্দা (arthrodial membrane) দিয়ে সংযোগ রক্ষা করে, যার ফলে খোসাগুলো সহজে নড়াচড়া এবং প্রয়োজনে লম্বা হয়ে যেতে পারে। বাগদা চিংড়ির বাহ্যিক অঙ্গসমূহ হলো- ১. রোস্টাম, ২. রাস্ট্রোল কাটা, ৩. পোষ্ট অর্বিটাল কাটা, ৪. হেপাটিক কাটা, ৫. কেরাপাস, ৬. প্রথম উদর উপাঙ্গ, ৭. ষষ্ঠ উদর উপাঙ্গ, ৮. টেলসন, ১. ইউরোপড, ১০. গ্লিওপড, ১১. পঞ্চম পেরিও পড়, ১২. প্রথম পেরিওপড, ১৩. এন্টেনা, ১৪. এ্যান্টেনাল কাঁটা ১৫. এন্টেনাল ব্লেড ও ১৬ এ্যান্টেনাল ফ্লাজেলা।
বাগদা চিংড়ির অভ্যন্তরীণ গঠন ও অঙ্গসমূহ দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ও অম্লতন্ত্রের কার্যকারিতার ফলে বাগদা চিংড়ি জীবনধারণ করে থাকে। বাগদা চিংড়ির অভ্যন্তরীণ অঙ্গসংস্থান প্রধানত পরিপাকতন্ত্র, রেচনতন্ত্র, শ্বসনতন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র, রক্ত সংবহনতন্ত্র ও প্রজননতন্ত্র নিয়ে গঠিত।

চিত্র-১.১৪: বাগদা চিংড়ির অভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহ

ক. পরিপাকতন্ত্র
বাগদা চিংড়ি সর্বভুক্ত ও নিশাচর প্রাণী। এরা সাধারণত রাতের বেলায় খাদ্য গ্রহণ করে। দিনের বেলার কাদার মধ্যে লুকিয়ে থাকে। ৰাগদা চিংড়ি চিমটাযুক্ত পা দিয়ে খাদ্যকণা মুখের ভিতরে নিক্ষেপ করে। অতঃপর খাদ্যকণা ম্যাক্সিলিপেডের দিকে অগ্রসর হয় এবং মুখের অভ্যন্তরের বিভিন্ন উপাম্পের সাহায্যে খাদ্যকণা আরও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণাতে পরিণত হয়ে খাদ্যনালিতে প্রবেশ করে। বাগদা চিংড়ির পরিপাকতন্ত্র মূলত পরিপাকনালি ও হেপাটোপ্যানক্রিয়াস গ্রন্থি সমন্বয়ে গঠিত। পরিপাকনালি মুর্খগহবর থেকে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত। অগ্র পরিপাকনালি ও পশ্চাৎ পরিপাকনালি থেকে সহজেই মধ্য পরিপাকনালিকে আলাদা করা যায়। কারণ অগ্র ও পশ্চাৎ পরিপাকনালিতে কাইটিনের সারি বিদ্যমান কিন্তু মধ্য পরিপাকনালিতে এ ধরনের কোন কাইটিন সারি থাকে না।

চিত্র-১.১৫: বাগদা চিংড়ির পরিপাকতন্ত্র

খ. রেচন

অধিকাংশ প্রাণীর ক্ষেত্রে রেচনতন্ত্রের মাধ্যমে প্রধানত দু'টি কাজ সম্পাদন হয়ে থাকে। প্রথমত রেচনতন্ত্র বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত বর্জ্য পদার্থ বা দুষিত পদার্থ দেহ থেকে নিষ্কাশন করে থাকে এবং দ্বিতীয়ত দেহ অভ্যন্তরস্থ লবণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। চিংড়ির ক্ষেত্রে প্রধান নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য পদার্থ হচ্ছে অ্যামোনিয়া। প্রসাব হিসেবে এই অ্যামোনিয়া ম্যাক্সিলারি গ্রন্থির মাধ্যমে দেহ থেকে নির্গত হয়। এই গ্রন্থিটি ম্যাক্সিলার পোড়ায় অবস্থিত। বাগদা চিংড়ির এই অর্শটি তেমন একটা উন্নত নয় এবং কিছু কিছু অ্যামোনিয়া বা নাইট্রোজেনঘটিত দুষিত পদার্থ ফুলকার সাহায্যে নির্গত হয়। বাগদা চিংড়ির ক্ষেত্রে ম্যাক্সিলারি গ্রন্থি অসমোরেগুলেশন প্রক্রিয়ায় তেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে না। ফ্রাস্টেসিয়ার অন্তর্গত অধিকাংশ প্রাণী যে বর্জ্য পদার্থ উৎপাদন করে থাকে তার ঘনত্ব ও রক্তের ঘনত্ব একই থাকে। তথাপি এই গ্রন্থি পটাসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম সংরক্ষণে সম্পৃক্ত থাকে এবং অতিরিক্ত ম্যাগনেসিয়াম সালফেট নির্গমনে সহায়তা করে। সাধারণত চিংড়ির ক্ষেত্রে লবণের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ফুলকাই এর প্রধান অঙ্গ। যে সকল প্রাণীর রক্তের লবণের ঘনত্ব এবং এদের চতুর্পার্শ্বের পানির লবণের ঘনত্ব বিভিন্ন রকম তাদেরকে অসমোরেগুলেটর বলা হয় এবং যাদের ঘনত্ব একই রকম তাদেরকে অসমোকনফরমারস বলে।

গ. শ্বসনতন্ত্র

চিংড়ির শ্বসনতন্ত্রের প্রধান অঙ্গ হচ্ছে ফুলকা। এই ফুলকার সাহায্যে চিংড়ি অক্সিজেন গ্রহণ করে থাকে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে থাকে। পেরিওপডের কক্সা থেকে থলের ন্যায় এই ফুলকার উৎপত্তি হয় অর্থাৎ এপিপোডাইটের উন্নত অবস্থাই ফুলকা হিসেবে পরিচিত। বক্ষের উভয় পার্শ্বের ব্রাঙ্কিওল প্রকোষ্ঠের সাথে ফুলকা সংযুক্ত থাকে। ব্রাঙ্কিওল প্রকোষ্ঠে পানি প্রবাহিত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের অঙ্গ আছে কিন্তু মূলত স্ক্যাফোগন্যাথাইটের সাহায্যে এই কাজ সম্পাদিত হয়ে থাকে। ম্যাক্সিলার এক্সোপোডকেই স্ক্যাফোগনাইট বলা হয়। এই স্ক্যাফোগনাইট পানিকে প্রকোষ্ঠে প্রবাহিত করে থাকে। চিংড়ির রক্তের শ্বাস রঞ্জককে হেমোসায়ানিন বলে। চিংড়ির রক্ত সাদা বা বর্ণহীন হয়ে থাকে। তবে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত দেখতে কিছুটা নীলাভ।

ঘ. স্নায়ুতন্ত্র

চিংড়ির স্নায়ুতন্ত্র যথেষ্ট উন্নত। বিভিন্ন স্নায়ু অঙ্গ এবং উপাঙ্গের সাথে সেরিব্রাল গ্যাংলিয়ন সংযুক্ত থাকে। চক্ষু স্ট্যাটোসিস্টস, প্রোপ্রাওরিসিপ্টরস, ট্যাক্টাইল রিসিপ্টর এবং কেমোরিসিপ্টরস চিংড়ির স্নায়ু অঙ্গ হিসেবে কাজ করে থাকে। চিংড়ির কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে সুপ্রা ইসোফেজিয়াল গ্যাংলিয়ন বা মস্তিষ্ক বলে। অগ্রবর্তী মন্তক উপাঙ্গের গোড়ার পশ্চাৎ দিকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র অবস্থিত। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র তিনটি অংশে বিভক্ত, যথা- ১. অগ্রবর্তী প্রোটোসেরিব্রাম, ২. মধ্য ডিউটোসেরিব্রাম এবং ৩. পশ্চাৎবর্তী ট্রাইটোসেরিব্রাম।

ঙ. রক্ত সংবহনতন্ত্র

চিংড়ির হৎপিন্ড দেখতে অনেকটা সাধারণ নালির মত। হৃৎপিন্ডটি চিংড়ির বুকের পৃষ্ঠদেশীয় অঞ্চল বরাবর পরিপাকনালির উপরে এবং পেরিকার্ডিয়াল সাইনাসের সাথে সংযুক্ত থাকে। চিংড়ির রক্ত সংবহণ প্রণালির প্রধান অঙ্গ অগ্রবর্তী এওটা হৃৎপিন্ড থেকে মাথা পর্যন্ত বিস্তৃত। চিংড়িতে কোনো শিরা থাকে না। অনেকগুলো সাইনাসের মধ্য দিয়ে রক্ত হৃৎপিন্ডে ফিরে আসে। ধমনি ও সাইনাসের ভাষ রক্তকে পিছনের দিকে প্রবাহিত হতে বাধা দেয়। চিংড়ির রক্তে দু'ধরনের কোষ থাকে, যথা- ছোট হাইয়ালিন এবং বড় দানাদার এ্যাসিৰোষাইটিস। সপ্তক বক্ষ অঞ্চলের স্টীয়েটেড পেশী এবং অক্ষীয় স্নায়ু কর্ডের মধ্যবর্তী অংশে সাইনাস অবস্থিত। প্রতিটি দেহ শক্ষকের সাথে প্রত্যেকটি ব্যাংলিয়নকে সংযুক্ত দেখা যায়।

চ. প্রজননতন্ত্র 

সাধারণত একই বয়সের পুরুষ চিংড়ি, স্ত্রী চিংড়ি অপেক্ষা আকারে ছোট হয়। বাগদা চিংড়ি সাধারণভাবে ১০ থেকে ১২ মাসের মধ্যে পরিপক্বতা লাভ করে। এ সময় প্রজননতন্ত্রের বিভিন্ন অঙ্গসমূহ খুব সহজেই শনাক্ত করা যায়।

চিত্র-১-১৬: সমবয়সী পুরুৰ চিংড়ি (উপর) ও স্ত্রী চিংড়ি (নিচ) 

পুংপ্রজননতন্ত্র

পুরুষ চিংড়ির প্রথম ঘোড়া সন্তরণ পদে একজোড়া পেটাসমা এবং পঞ্চম জোড়া চলন পদের গোড়ায় এক জোড়া গুং জননেন্দ্রিয়ের ছিদ্র থাকে। চিংড়ির দ্বিতীয় পর্যায়ের বা গৌণ যৌনাঙ্গ সঙ্গমে সহায়তা করে। দ্বিতীয় সন্তরণ পদে এপেনডিক্স ম্যাসকুলিনা থাকে। পেটাসমা ও এপেনডিক্স ম্যাসকুলিনা স্পার্মাটোফোর বা বীর্য স্থানান্তরে সহায়তা করে থাকে। চিংড়ির পুং জননতন্ত্র এক জোড়া টেসটিস, ভাস ডিফারেন্সিয়া এবং এক জোড়া প্রান্তিক বীর্য থলে দ্বারা গঠিত। বীর্য হুলে পুং জননেন্দ্রিয়ের ছিদ্র পথে বের হয়ে আসে। পেটাসমা স্ত্রী চিংড়ির মেলিকামে বীর্য স্থানান্তরের কাজ করে থাকে।

স্ত্রী প্রজননতন্ত্র 

স্ত্রী চিংড়ির জননেন্দ্রিয় একজোড়া ডিম্বাশয় ও ডিম্বনাদি দ্বারা গঠিত। পরিপক্ক চিংড়ির ডিম্বাশয় লেজ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। ডিম্বনালী তৃতীয় জোড়া চলন পদের পোড়ায় উন্মুক্ত হয়। স্ত্রী চিংড়ির ৪র্থ ও ৫ম জোড়া চলন পদের মধ্যবর্তী স্থানে থেলিকাম ও ৩য় জোড়া চলন পদের গোড়ায় এক জোড়া স্ত্রী জননেন্দ্রিয়ের ছিদ্র থাকে। গ্রী চিংড়ি সঙ্গমকালে পুরুষ চিংড়ির বীর্য নির্গত হলে বেলিকানের মধ্যে ধারণ করে রাখে এবং ডিম ছাড়ার সময় পানিতে এ বীর্য ছেড়ে দেয়। স্ত্রী চিংড়ির বেলিকামের রত্ন বা ছিদ্র সাধারণ অবস্থার বন্ধ থাকে। তবে খোলস বদলানোর পর খোসা শক্ত হওয়ার মুহুর্ত পর্যন্ত এ ছিদ্র খোলা থাকে। তাই স্ত্রী চিংড়ি খোলস বদলানোর পর পরই পুরুষ চিংড়ির সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়। পুরুষ চিংড়ি বন্ধ জলাশয়ে পরিপক্বতা লাভ করে কিন্তু স্ত্রী চিংড়ি বন্ধ জলাশয়ে পরিপক্বতা লাভ করে না।

স্ত্রী চিংড়ির চোখের বোটায় এক্স অঙ্গ ও সাইনাস গ্রন্থি থাকে। এক্স অঙ্গ ডিম্বাশয় পরিণলতা লাভ রোধের হরমোন উৎপাদন করে এবং সাইনাস গ্রন্থি তা মজুদ রাখে। প্রাকৃতিক পরিবেশে এই হরমোন উৎপাদিত হলেও পরিবেশগত কারণেই উৎপাদিত হরমোনের পরিমাণ কমে যায় এবং স্ত্রী চিংড়ি পরিপক্বতা লাভ করে। কিন্তু বদ্ধ জলাশয়ে উৎপাদিত হরমোন চিংড়ি শরীরেই থেকে যায়, ফলে ডিম্বাশয় পরিপক্বতা লাভ করে না। তাই হ্যাচারিতে স্ত্রী চিংড়ির ডান অথবা বাম চোখের বোটা কেটে বা অন্য কোন পদ্ধতিতে উক্ত চোখের বোটার কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দিলে হরমোন উৎপাদনের পরিমাণ কমে যায়। এবং ডিম্বোশয় পরিপক্বতা লাভ করে। স্ত্রী চিংড়ির চোখের বোটার কার্যক্ষমতা নষ্ট করার পদ্ধতিকে eye stalk ablation বলে। 

Content added || updated By
Promotion