SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - ফিন্যান্সিয়াল কাস্টমার সার্ভিসেস-১ - ব্যাংক হিসাব | NCTB BOOK

ক. KYC ফর্মের গুরুত্ব ( Importance of KYC form) 

 ব্যাংক হিসাব খোলার সময় আবেদন ফর্মের সাথে যে ফর্ম বাধ্যতামূলকভাবে হিসাবগ্রহীতাকে পূরণ করতে হয় এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে হিসাবগ্রহীতা প্রদত্ত তথ্যের বিষয়ে যাচাই করে স্বাক্ষর দিতে হয় তাকে KYC ফর্ম বলে। KYC-এর পূর্ণরূপ হলো Know Your Customer। অর্থাৎ তোমার গ্রাহককে জানো। মানি লন্ডারিং আইন সব দেশে চালু হওয়ার পর থেকে ভুয়া নামে হিসাব খোলা ও অন্যায় লেনদেন নিয়ন্ত্রণের জন্য হিসাব খোলার সময় এ ধরনের ফর্ম পূরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে হিসাবগ্রহীতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচিতিমূলক প্রয়োজনীয় তথ্যের সাথে ব্যাংকে যে অর্থ জমা হবে তার উৎস কী, হিসাবগ্রহীতা কোন ধরনের কাজ বা ব্যবসায়ের সাথে জড়িত, গ্রাহকের মোট সম্পত্তির পরিমাণ, কীভাবে হিসাব খোলা হয়েছে, প্রত্যাশিত আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ, হিসাবগ্রহীতার তথ্য বিবেচনায় তার লেনদেনে ঝুঁকির মাত্রা ইত্যাদি বিষয় লেখা হয়। এরূপ ফর্ম পূরণ ব্যাংক কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে সতর্কতা, সচেতনতা ও দায়বদ্ধতা বাড়িয়েছে। এতে ভুয়া নামে হিসাব খোলার প্রবণতা বন্ধ হয়েছে এবং অন্যায় লেনদেন বিশেষ করে সন্ত্রাসী বা জঙ্গী কর্মকান্ডে অর্থায়ন অনেকটা প্রতিরোধ করা গেছে। তাই ব্যাংক হিসাবের ক্ষেত্রে KYC ফর্মের গুরুত্ব অপরিসীম।

চিত্র: গ্রাহক পরিচিতি ফর্ম

গ্রাহক সম্পর্কে সঠিক তথ্য জেনে লেনদেন বা ব্যবসায় পরিচালনা করার ক্ষেত্রে KYC ফর্ম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । নিচে KYC ফর্মের গুরুত্ব তুলে ধরা হলো- 

→ KYC ফর্মের মাধ্যমে গ্রাহকের সঠিক পরিচয় সনাক্ত করা যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে, গ্রাহক কোনো রকম অবৈধ ও সন্ত্রাসী কাজের সাথে জড়িত আছে কি না। 

→ গ্রাহক কী উদ্দেশ্যে ব্যাংকে হিসাব খুলতে আগ্রহী এবং তার লেনদেনের প্রকৃতি কেমন হবে ইত্যাদি তথ্য KYC ফর্মের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। গ্রাহক একবারে কী পরিমাণ অর্থ তুলবে এবং জমা দিবে, এসব তথ্য KYC ফর্মের মাধ্যমে সংগ্রহ করায় লেনদেনে সচ্ছতা বজায় থাকে। 

→ ব্যাংক KYC ফর্মের মাধ্যমে গ্রাহকের হিসাবকে শ্রেণিবিভাগ করে। যেমন: ঝুঁকিপূর্ণ হিসাব, কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসাব। কোনো গ্রাহক অস্বাভাবিক লেনদেন করে কি না, তা KYC ফর্মে দেওয়া তথ্যের সাথে মিলিয়ে দেখতে পারে।

→ অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার মাধ্যমে গ্রাহক KYC ফর্মে উল্লিখিত শর্ত অনুযায়ী লেনদেন করছে কি না, তা জানা যায় এর মাধ্যমে লেনদেনের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

তাই বলা যায়, গ্রাহকের সঠিক পরিচয় সনাক্তকরণে KYC ফর্মের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

খ. TP-এর ধারণা (Concept of Transaction Profile)

  প্রতিযোগিতার বাজারে গ্রাহক সেবা ব্যাংকারদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। দ্রুততম সময়ে সেবাদান যেকোনো ব্যাংকেরই সেবামান বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু দ্রুততম সেবা মানে ব্যাংকের স্বার্থ বিসর্জন কিংবা গ্রাহকের নিরাপত্তার জলাঞ্জলি নয়। আবার ঠিক একইভাবে কোনো সেবার নিরাপত্তা বলয় যেন এমন না হয় যে, গ্রাহক সেই সেবাটি গ্রহণেই নিরুৎসাহিত হয়। অন্যদিকে, দেশের প্রচলিত ব্যাংকিং আইনের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো লেনদেন অনুমোদন করা বা সেবা প্রদান করাটাও ব্যাংকের সুনামের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং আইন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অর্থাৎ ব্যাংককে একটি নির্দিষ্ট আইনি ও বিধিবদ্ধ কাঠামোর মধ্যেই তার ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়।

মানি লন্ডারিং, হুন্ডি ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধে ব্যাংক হিসাবে Transaction Profile (TP) নিশ্চিত করাটাও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নির্দেশনা, যা তফসিলি ব্যাংকের জন্য অবশ্য পালনীয় বিধিবিধান। TP (Transaction profile) হচ্ছে ব্যাংক হিসাবে গ্রাহক কর্তৃক ঘোষিত লেনদেনের অনুমিত মাত্রা। প্রতিনিয়ত লেনদেন হওয়া হিসাবগুলোর (সঞ্চয়ী, চলতি, এসএনডি, সিসি, ওডি প্রভৃতি) ক্ষেত্রেই গ্রাহকের কাছ থেকে টিপি'র ঘোষণা নিতে হয়। হিসাব ফরমের কয়েকটি মূল অংশের (পরিচয়দানকারী, ব্যক্তিসংক্রান্ত তথ্যাবলি, নমিনী, টিপি, কেওয়াইসি) একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে টিপি। সঞ্চয়ী, চলতি, এসএনডি, সিসি, ওডি প্রভৃতি হিসাব খুলতে গ্রাহককে অবশ্যই হিসাব ফরমের সঙ্গে সংযুক্ত টিপিতে তার পেশা ও আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ লেনদেনের ঘোষণা দিতে হয়।

জেনে রাখো

ব্যাংক পাস বই : ব্যাংকিং-এ ব্যাংক ও তার গ্রাহকের মধ্যকার সব লেনদেন একটি নির্দিষ্ট হিসাবের বিবরণীতে লিপিবদ্ধ করা হয়। ব্যাংকের সরবরাহ করা যে ছোট বইয়ে গ্রাহকের সঞ্চয়ী হিসাবের লেনদেনের পরিমাণ ও উদ্বৃত্তসমূহ সংক্ষিপ্ত আকারে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে ব্যাংক পাস বই বলে। মূলত সঞ্চয়ী হিসাব খোলার পর ব্যাংক তার গ্রাহককে লেনদেন সংক্রান্ত হিসাবের যাবতীয় তথ্য দেওয়ার উদ্দেশ্যে পাস বই সরবরাহ করে। এতে গ্রাহকের নাম ও হিসাব নম্বর লেখা থাকে। পাস বইয়ে তারিখ অনুযায়ী গ্রাহকের প্রাথমিক জমা, জমাকৃত অর্থের পরিমাণ, উত্তোলনের পরিমাণ, প্রাপ্তি, প্রদান ও সমাপনী উদ্বৃত্তের জের উল্লেখ করা থাকে। এছাড়া ব্যাংকের খরচ, বাট্টা ও সুদের পরিমাণ সম্পর্কে গ্রাহক পাস বই থেকে জানতে পারে। পাস বইয়ে উল্লেখিত প্রতিটি লেনদেনের পাশে তারিখ অনুযায়ী ব্যাংক কর্মকর্তার স্বাক্ষর থাকে। শুধু সঞ্চয়ী হিসাবের গ্রাহকরাই ব্যাংক পাস বই পেয়ে থাকেন। পাস বইয়ে লেনদেনের উদ্বৃত্ত লিপিবদ্ধ করার লক্ষ্যে গ্রাহক নির্দিষ্ট সময় পরপর বইটি ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে জমা দেয়। একে ব্যাংক হিসাব বিবরণীর সংক্ষিপ্ত অনুলিপিও বলা যেতে পারে।

Content added By