SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় - টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) | NCTB BOOK

সপ্তম শ্রেণিতে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা জেনেছি। এ পাঠে আমরা আরও কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে জানব। এছাড়া এ পাঠে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে জানব।

ভূমিকম্প
পৃথিবীতে যত রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে তার মধ্যে ভূমিকম্পই সবচেয়ে অল্প সময়ে সবচেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ ঘটায়। ভূমিকম্পের ব্যাপারে কোনো আগাম সতর্ক সংকেত দেওয়া সম্ভব নয়। ভূমিকম্পের সময় কিছু বুঝে উঠার আগেই একটি বা কয়েকটি ঝাঁকুনিতে পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। একই স্থানে সাধারণত পর পর কয়েকবার বড়, মাঝারি ও মৃদু ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে। ইরান, চীন, মেক্সিকো, চিলি ও জাপানের ভূমিকম্পে আমরা তার প্রমাণ পেয়েছি। বাংলাদেশ ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা, সিলেট, রংপুর ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে এই ঝুঁকি বেশি। চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে ইদানীং প্রায়ই মৃদু ভূমিকম্প হচ্ছে। ২০১১ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর সংগঠিত ভূমিকম্পটি ছিল বেশ প্রচণ্ড। এ ভূমিকম্পে সারা বাংলাদেশ কেঁপে উঠে। ভূমিকম্প প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা এখনও মানুষের জানা নেই। তবে ভূমিকম্পের সময় আত্মরক্ষা এবং ভূমিকম্পের পর উদ্ধার ও ত্রাণকাজ সম্পর্কে মানুষকে ধারণা দিতে হবে।

সুনামি সুনামি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম। এটি মূলত জাপানি শব্দ। যার অর্থ হলো 'সমুদ্র তীরের ঢেউ”। সমুদ্রের তলদেশে প্রচণ্ড ভূমিকম্প বা অগ্ন্যুৎপাতের ফলে, কিংবা অন্য কোনো কারণে, ভূআলোড়নের সৃষ্টি হলে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে প্রবল ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। এই প্রবল ঢেউ উপকূলে এসে তীব্র বেগে আছড়ে পড়ে। এই সামুদ্রিক ঢেউয়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮০০ থেকে ১৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। সুনামির কারণে সমুদ্রের পানি জলোচ্ছ্বাসের আকারে ভয়ঙ্কর গতিতে উপকূলের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ঢুকে পড়তে পারে। এর ফলে স্বল্প সমরের মধ্যেই উপকূলের ঘর-বাড়ি, দালান, রেলপথ, রাস্তাঘাট, বৈদ্যুতিক যোগাযোগ-ব্যবস্থা, বাণিজ্য কেন্দ্র প্রভৃতি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

২০১১ সালে জাপানের উত্তর-পূর্ব এলাকায় ভয়াবহ সুনামি সংগঠিত হয়। ৮.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে এই সুনামি সৃষ্টি হয়। জাপানের রাজধানী টোকিও শহরের প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে এই সুনামি আঘাত হেনেছিল। এর ফলে জাপানের পাঁচটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তা বাতাস ও পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির সৃষ্টি করে। সুনামির সময় হাজার হাজার ট্রেনযাত্রী নিখোঁজ হয়। জাহাজ সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যায়।

ভূমিধস
পাহাড়ের মাটি ধসে পড়াকেই ভূমিধস বলা হয়। যেসব পাহাড় বেলে পাথর বা শেল কাদা দিয়ে গঠিত ভারি বৃষ্টিপাত হলে সেসব পাহাড়ে ভূমিধস ঘটতে পারে। সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি ও ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেই ভূমিধস ঘটে থাকে। তাছাড়া মানুষ ব্যাপকহারে গাছপালা ও পাহাড় কেটে ভূমিধসের কারণ ঘটায় । ভূমিধসের ফলে যারা পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করে তাদের ঘরবাড়ি মাটির নিচে চাপা পড়তে পারে। আমাদের দেশে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, সিলেট, নেত্রকোনা প্রভৃতি জেলায় প্রায়ই ভূমিধস হয়ে মানুষের প্রাণহানি ঘটে ও বাড়িঘর নষ্ট হয়।

অগ্নিকাণ্ড বা দাবানল
অগ্নিকাণ্ড যেমন প্রাকৃতিক কারণে ঘটে তেমনি মানুষের অসাবধানতার ফলে বা দুর্ঘটনাজনিত কারণেও ঘটতে পারে। প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে কোনো কোনো দেশে বনাঞ্চলে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে দেখা যায়। একে দাবানল বলে । এর ফলেও বৃক্ষসম্পদ নষ্ট হয়। নষ্ট হয় জীববৈচিত্র্য।

আমাদের দেশে দাবানলের ঘটনা সাধারণত ঘটে না। কাজেই আমাদের দেশে অগ্নিকাণ্ডকে ঠিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলা যাবে না। এখানে দুর্ঘটনা বা মানুষের অসাবধানতাই অগ্নিকাণ্ডের কারণ দুর্ঘটনাজনিত অগ্নিকাণ্ড সাধারণত শিল্পকারখানা, তেল শোধনাগার, গার্মেন্টস শিল্প, পাটকল, রাসায়নিক গুদাম বা কারখানা, এমনকি বসতবাড়ি, দোকানপাট, অফিস ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ঘটতে দেখা যায়। ঢাকার নিমতলিতে রাসায়নিক গুদাম থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে বহু লোকের প্রাণহানি ঘটেছে, অনেকে পঙ্গু হয়ে পড়েছে, অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে। এছাড়াও আমাদের দেশে গ্রাম ও শহরাঞ্চালে জ্বলন্ত চুলা, কুপি, মশার কয়েল, সিগারেটের আগুন, হারিকেন প্রভৃতি থেকেও অসাবধানতাবশত অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটে।

কাজ-১: বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগের নাম উল্লেখ করো।

কাজ-২ : প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগের উৎস ও প্রভাব উল্লেখ করো।

Content added By