SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

তৃতীয় শ্রেণি (প্রাথমিক স্তর ২০২৪) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - NCTB BOOK

মহান আল্লাহর অস্তিত্ব

 

আমাদের পৃথিবী দেখতে কত সুন্দর! এতে রয়েছে প্রকৃতি ও জীবজগৎ। রয়েছে নানা রকমের গাছপালা, ফুলফল ও পশুপাখি। নিচের ছবিটি দেখ। কী সুন্দর দেখতে! তাই না? কে সৃষ্টি করলেন এসব?

 

আমরা যে পোশাক পরি তা কারা তৈরি করেন? দর্জিরা। আমাদের চারপাশে যে বাড়িঘর রয়েছে তা কারা বানিয়েছে? মিস্ত্রিরা। কোনো কিছুই এমনি এমনি হয় না। তাহলে এই বিশাল পৃথিবী কীভাবে সৃষ্টি হলো? নিশ্চয়ই কেউ একজন সৃষ্টি করেছেন।

 

একটি নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে এই পৃথিবী চলে। রাতের পরে দিন আসে। একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মে পৃথিবীতে ঋতুর পরিবর্তন হয়। গ্রীষ্মের পর বর্ষা এবং শীতের পর বসন্ত আসে। কে এই নিয়মের স্রষ্টা?

আমাদের পৃথিবী ও অন্যান্য জগতের সৃষ্টিকর্তা হলেন মহান আল্লাহ। তিনি মহাজগতকে সৃষ্টি করে এর পরিচালনার ব্যবস্থাও করেছেন। তাঁর নির্দেশে নির্ধারিত নিয়মে সৃষ্টিজগৎ চলে। এ সম্পর্কে তিনি পবিত্র কুরআনে বলেন,

(উচ্চারণ: ওয়াশ শামসু তান্ত্রী লিমুস্তাকারিল্ লাহা যা-লিকা তাকদীরুল্ 'আযীযিল্ 'আলীম।)

অর্থ: "আর সূর্য ভ্রমণ করে তার গন্তব্যের দিকে। এটি পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ"। (সূরা ইয়াসিন: ৩৮)

আমরা সৃষ্টিজগতের এসব শৃঙ্খলা দেখে মহান আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারি। তাঁর ওপর আমাদের ইমান ও বিশ্বাস সুদৃঢ় করতে পারি। মহান আল্লাহকে ভালোবেসে আমরা তাঁর ইবাদাত অনুশীলন করব।

 

 

ইমান এর পরিচয়

ইমান আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো বিশ্বাস স্থাপন করা। মহান আল্লাহ, ফেরেশতা, আসমানি কিতাব, নবি-রাসূল, আখিরাত এবং ভাগ্যের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন হলো ইমান। ইমানের মূল বিষয়গুলো হলো

 

যে ব্যক্তি বিশ্বাস স্থাপন করে তাকে মু'মিন বা বিশ্বাসী বলা হয়। ইমানদার ব্যক্তি নম্র ও বিনয়ী হয়। তিনি খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকেন। মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে ও তাঁর নির্দেশ মেনে তাঁর ইবাদাত করেন।

 

 

ইমানে মুজমাল

 

কালিমা বা বাক্য পাঠ করে আমরা আমাদের ইমান সুদৃঢ় করি। ইমানে মুজমাল এরূপ একটি কালিমা। ইমানে মুজমাল হলো ইমানের সার-সংক্ষেপ। উচ্চারণ ও অর্থসহ ইমানে মুজমাল নিম্নরূপ:

বাংলা উচ্চারণ: আমান্তু বিল্লাহি কামা হুয়া বি আস্মায়িহী ওয়া ছিফাতিহী ওয়া ক্বাবিন্তু - জামিয়া আহকামিহী ওয়া আরকানিহী।

 

বাংলা অর্থ: আমি মহান আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করলাম যেভাবে তিনি আছেন তাঁর নামসমূহে ও গুণাবলিতে। আমি তাঁর সব আদেশ ও নিষেধসমূহ (আহ্কাম ও আরকান) মেনে নিলাম।

 

ক) বিষয়বস্তু পড়ি। নিচে দেওয়া ইমানের মূল বিষয়গুলোকে ধারাবাহিকভাবে সাজাই। কাজটি একাকী করি।

(১) ভাগ্যের ভালো-মন্দ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তার প্রতি বিশ্বাস (২) আসমানি কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস (৩) আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস (৪) ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস (৫) মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস (৬) নবি-রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস (৭) মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের প্রতি বিশ্বাস।

 

ইবাদাতের পরিচয়

প্রতিদিন আমাদের চারপাশের মসজিদ থেকে আজানের সুমধুর শব্দ ভেসে আসে। আমরা সবাই আজান শুনে মসজিদে নামাজ পড়তে যাই। রমজান মাস এলে সারা মাসব্যাপী রোজা রাখি। এসবই আমরা করি মহান আল্লাহর ইবাদাত করার উদ্দেশ্যে। মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা। তাঁর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে তাঁর ইবাদাত করা আমাদের কর্তব্য।

আমরা নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, বড়দের শ্রদ্ধা করি ও ছোটদের স্নেহ করি। অসহায় গরিবদের সাহায্য-সহযোগিতাসহ আরও অনেক ভালো ভালো কাজ করি। এসবই আমরা করি মহান আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে।

ইবাদাত শব্দের অর্থ আনুগত্য। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আল্লাহর প্রতি অনুগত থেকে তাঁর আদেশ ও নিষেধ মেনে চলা হলো ইবাদাত। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ইবাদাতের মূল লক্ষ্য। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আল্লাহর নির্দেশিত যে কোনো কাজই ইবাদাত। এমনকি লেখাপড়া, খাওয়া-দাওয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, চলাফেরা করা ও ঘুমানো এসবও ইবাদাত।

আমরা যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশিত পথে চলি তাহলে তিনি সন্তুষ্ট হয়ে আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে পুরস্কৃত করবেন।

 

 

ইসলামের পাঁচটি মৌলিক বিষয়

 

ইসলামের পাঁচটি মৌলিক বিষয় হলো ইমান, সালাত, সাওম, হজ্জ ও জাকাত।

ইসলামের প্রধান পাঁচটি মৌলিক বিষয়ের মধ্যে ইমান অন্যতম। ইমান আনার পর মুসলমানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হচ্ছে সালাত। সালাত অর্থ দু'আ করা। সাত বছর থেকে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা আবশ্যক।

রোজাকে আরবিতে সাওম বলে। সাওম অর্থ বিরত থাকা। সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার খাওয়া-দাওয়া ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকাকে সাওম বলে। প্রত্যেক মুসলমানের ওপর পুরো রমজান মাস সাওম বা রোজা পালন করা ফরজ।

হজ্জ অর্থ ইচ্ছা করা বা সংকল্প করা। পবিত্র মক্কায় হজ্জ পালনের জন্য গমন করতে হয়। আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমান নারী-পুরুষের ওপর হজ্জ ফরজ।

জাকাত শব্দের অর্থ পবিত্র করা। জাকাত প্রদানের মাধ্যমে সম্পদ দান করে সম্পদ পবিত্র করা হয়। জাকাত ধনিদের নিকট থেকে প্রাপ্য গরিবের হক।

 

 

 

 

Content added By