SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

এসএসসি(ভোকেশনাল) - ফ্রুট এন্ড ভেজিটেবল কাল্টিভেশন-১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

ঝিঙার চাষ

ঝিঙার জাতঃ ছুঁয়ে বা চৈতালী ঝিঙা উত্তরবঙ্গের কোন কোন জেলায় চাষ হয়। গ্রীষ্মকালে চাষ হলে তাকে খুঁয়ে এবং বর্ষাকালে চাষ হলে তাকে পালা বা মাচার ঝিঙা বলে। তবে ঝিঙার অনুমোদিত ও উন্নত কয়েকটি জাত আছে। যেমন- ফিল্ড চ্যাম্পিয়ন, লম্বা ঝিঙা, বার পাতা ইত্যাদি।

জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ- ঝিঙা চাষের জন্য দোঁআশ মাটি বেশি উপযোগী। তবে সব ধরনের মাটিতেই চাষ করা যায়। ঝিঙা চাষের জমির আইল ভালোভাবে কুপিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে মাটি ঝুরঝুরে ও নরম করে নিতে হয়। আইল চিকন হলে আইল হতে ১ মিটার দূরে অর্থাৎ জমিতে মাদা তৈরি করে মাদায় সার দিতে হয়। আইল উঁচু ও চওড়া করে ঝিঙা চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করা যায়। জমি ছোট ছোট খণ্ড হলে চারকোণায় ঝিঙা চাষের জন্য উপযোগী করা যায়।

সার মাত্রা ও প্রয়োগের নিয়ম ও প্রতিটি মাদা যে পরিমাণ সার দিতে হয় তা উল্লেখ করা হলো।

সারের নাম

প্রয়োগের পরিমাণ (গ্রাম)

পচা গোবর সার১০০০
ইউরিয়া৫০
টিএসপি৩০
এমওপি৩০
বোরণ২-৩

জমির আইলে মাদা বা জমির ভিতরে মাদা তৈরির সময় গোবর সার, টিএসপি এবং তিন ভাগের একভাগ এমওপি সার আইলের মাটি বা মাদার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া ও অবশিষ্ট এমওপি সার সমান দুভাগে ভাগ করে ১ম ভাগ বীজ গজানোর ১৫ দিন পর এবং ২য় ভাগ চারার বয়স ৪-৫ সপ্তাহ হলে উপরিপ্রয়োগ করে মাটি খুচিয়ে আগলা করে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।

চারা রোপণ ও অতবর্তী পরিচর্যা

মাদার আকার হবে  ×  ×  ঘন সেন্টিমিটার। তবে মাদা তৈরির জন্য নির্বাচিত উঁচু জায়গা এবং গর্তের আকার  ×  ×  ঘন সেন্টিমিটার হলে ভালো হয়। ঝিঙার বীজ গজাতে সময় লাগে। তাই বীজ বপনের পূর্বে ১ মিনিট ভিজিয়ে নিতে হয়। এতে বীজ তাড়াতাড়ি গজায়। প্রতি মাদায় ৩-৪টি করে বীজ বপন/রোপণ করতে হয় । মাদা হতে মাদায় গাছের দূরত্ব ১ মিটার রাখতে হয়। মাদায়/আইলে আগাছা জন্মানোর সাথে সাথেই দমন করতে হয়। কোন স্থানে বীজ না গজালে সেখানে পুনরায় তাড়াতাড়ি নতুন করে বীজ রোপণ করতে হয়। গাছ লতানোর ভাব শুরু হলেই মাচা/বাউনি করে দিতে হয়। তবে ঝিঙার জন্য মাচা বেশি উঁচু করার প্রয়োজন হয় না। সাধারণত ৩ ফিট উঁচু করে মাচা করলেই যথেষ্ট।

পোকা দমন বিটল পোকা- গাছের পাতা খেরে ক্ষতি করে। হাতজান দিয়ে ধরে পরম বাষ্প দিয়ে বা পরম পানিতে দিয়ে মারা যায়। ফেনিট্রোথিয়ন ৫০ তরুণ ২ মিলি লিটার ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করে দমন করা যায় ।

গান্ধী পোকা - পাতার রস চুষে খায়। আলোর ফাঁদ / হাতজানের সাহায্যে সংগ্রহ করে পোকা মেরে ফেলা যায়। হেক্টর প্রতি ১-১.২ লিটার ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি তরল বা ফেনিট্রোথিয়ন ৫০ তরল ৫০০-৭০০ লিটার পানিতে - মিশিয়ে স্প্রে করে দমন করা যায়।

মাছি পোকা ফল নষ্ট করে দেয়। আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে পুঁতে ফেলতে হবে বা ফুটন্ত পানিতে ডুবিয়ে পোকা মেরে ফেলতে হবে। ফল ধরা গাছে বিষটোপ ব্যবহার করা যায় (১০০ গ্রাম পাকা মিষ্টি কুমড়া কুচি কুচি করে কেটে খেতলিয়ে ভাতে ০.৫ গ্রাম ডিপটেরেক্স ৮০ এসপি ও ১০০ মিলি. পানি মিশিয়ে ছোট মাটির পাত্রে রেখে তিনটি খুটির সাহায্যে ০.৫ মিটার উঁচুতে স্থাপন করা)।

রোগ দমন- পাউডারি মিলডিউ রোগে আক্রান্ত গাছের পাতার উপরে কাজে এবং ফলে সাদা সাদা পাউডার এর ন্যায় দেখা যায়। এতে পাতা নষ্ট হয়ে যায়, ফল ছোট হয়। ফলন কমে যায়। ডাউনি মিলডিউ রোগে আক্রান্ত গাছের পাতার নিচের দিকে ধূসর বেগুনি রঙ ধারণ করে আক্রান্ত গাছ দুর্বল হয়ে আস্তে আস্তে মারা যায়। এ রোগ দমনে ম্যানকোজের/কপার ঘটিত বালাইনাশক স্প্রে করে রোগ দমন করা যায় ।

সেচ ও নিকাশঃ গাছের গোড়ায় যাতে পানি জমতে না পারে সেজন্য জমি তল অপেক্ষা ৭-৮ সেমি. উঁচু করে মাদা তৈরি করে সেখানে বীজ রোপণ করতে হয়। বিশেষ করে বর্ষার্তী ঝিঙার জন্য আগে হতেই নালা কেটে পানি নিকাশের ব্যবস্থা করে রাখতে হয়। যদি একটানা ১০-১৫ দিন খরা হয় তাহলে ঝাঁঝরি দিয়ে সেচ দিয়ে মাটিতে জো আসলেই খুচিয়ে মাটি আলগা করে দিতে হয়।

ফসল সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ

ঝিঙা বীজ রোপণের সাধারণত ৪৫-৫৫ দিন পর হতে ফসল সংগ্রহ করা যায়। বিস্তার গায়ের শিরাগুলো নষ্ট হলে দেখতে খারাপ দেখার এবং মান নষ্ট হয়ে যার। তবে কটি থাকা অবস্থার সংগ্রহ করে বাজারে পাঠাতে হয়। বিভা উঠাতে বিলম্ব হলে ভিতরে আঁশ হয়ে যাওয়ায় খাওয়ার অনুপোযোগী হয়ে যায়। বাঁশের খুঁটিতে সবুজ ও সতেজ পাতা বা চট বিছিয়ে ঝিঙা বাজারে দূরে পাঠাতে হয়। বন্ধায় করে বাজারে পাঠালে পায়ে দাগ পড়ে যায়।

সংগ্রহের পর ঝিঙা, চিচিংগা, পটল ও করলার চাষাবাদ ঝিঙা ১ দিনের বেশি রাখলে স্বাভাবিক রঙ নষ্ট হয়ে যায়। গায়ে দাগ পড়ে যা দেখতে হলদে বাদামি মত হয়। এতে মান নষ্ট হয়ে যায়। ফলন হেক্টর প্রতি ১০-১২ টন সবজি হয়।

চিচিংগা চাষ

চিচিংগার জাত- চিচিংগার বিভিন্ন জাতের মধ্যে ঝুমলং জাত বেশি জনপ্রিয়। কেননা ঝুমলং বেশি ফলন দেয় । চট্টগ্রাম ও ঢাকা অঞ্চলে প্রচলিত জাতটি সাদাটে বা হালকা সবুজ বর্ণের। এটি কিছুটা আগাম চাষ করা যায়। তবে এ জাতটি খাটো, তাই পরিবহণ ও বিক্রয়ে সুবিধা হয়। চিচিংগার বিভিন্ন জাতের মধ্যে সাডারি সাদা, সাদা ডোরাকাটা, সবুজ ডোরাকাটা বাংলাদেশে চাষ হচ্ছে।

জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ

জমি তৈরিঃ বেশি পরিমাণ জৈব সার প্রয়োগ করে যেকোন ধরনের জমিতে চিচিংগা চাষ করা যায়। তবে কম সূর্যের আলো ও বেশি বৃষ্টিতে ফলন কম হয়। চিচিংগার জন্য সুনিষ্কাশিত দোঁআশ মাটি সবচেয়ে ভালো। জমি ৩/৪টি চাষ আড়াআড়িভাবে দিয়ে প্রতিবার মই দিয়ে মাটির ঢেলা ভেঙে ফেলতে হয়। এরপর কোদাল দিয়ে আইলের ন্যায় তৈরি করতে হয়। এ আইল কোদাল দিয়ে কুপিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে ঝুরঝুরে করে নিদিষ্ট দূরত্বে মাদা তৈরি করতে হয়। আইল তৈরির সময় প্রয়োজনীয় সার মাদায় বা গর্তে দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয়। এছাড়াও আইলের মাথায় ২দিকে ৪ কোণার উঁচু স্থানে মাদা করে চিচিংগা চাষ করা যায়।

সারের পরিমাণ ও প্রয়োগঃ মাদা/গর্তপ্রতি সারের পরিমাণ

চারা রোপণ ও অন্তবর্তী পরিচর্যা- চিচিংগা বীজ রোপণের জন্য জমিতে মাদার আকার হবে ২০ × ২০ × ২০ ঘন সেমি. এবং উঁচু স্থানে তৈরিকৃত মাদার আকার হতে ৩০ × ৩০ × ৩০ ঘন সেমি.। প্রতি মাদায় ৩-৪টি সুস্থ বীজ রোপণ করতে হয় । বীজের আবরণ শক্ত বিধায় রোপণের আগে প্রায় ২-৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে ভালো হয়। মাদায় বীজ রোপণের সময় ১.৫-২ সেমি. গভীরে বীজ স্থাপন করতে হয়। চারা গজানোর পর ১২-১৫ সেমি. লম্বা হলে প্রতি মাদায ১টি করে সুস্থ সবল চারা রেখে বাকি চারাগুলো উঠিয়ে দিতে হয়। এ চারাটি প্রায় ২০ সেমি. লম্বা হলে বাঁশের কঞ্চি, অন্য গাছের ডাল বা ধৈঞ্চা দিয়ে আরাহেন করার সুযোগ করে দিতে হয়, যাতে মাচায় সহজে উঠতে পারে। আবার কোদাল দিয়ে কুপিয়ে তৈরি মাটির আইলের ওপর মাচা বানায়ে তাতে চাষ করা যায়। মাচার প্রস্থ ১.৫ মিটার এবং জমির প্রাপ্যতার ভিত্তিতে সুবিধামত লম্বা করা যায় ।

পোকা দমন

বেড় পাম্পকিন বিটল- পূর্ণ বয়ক পোকা পাতা খেয়ে পাতায় গোলাকার ছিদ্র তৈরি করে। এতে গাছ মারা যেতে পারে। এর শুককীট মাটিতে থাকে এবং বড় গাছের শিকড় কেটে ক্ষতি করে থাকে । ঝিঙার অনুরূপ দমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

ইপিলাকনা বিটল- এর গ্রাব বা পূর্ণ বয়স্ক পোকা পাতার সবুজ অংশ খেয়ে পাতা বিবর্ণ ও জালির ন্যায় করে ফেলে। এ পোকা দমনে ফেনিট্রোথিয়ন/ম্যালাথিয়ন/ডায়াজিনন যে কোন ১টি ২ মিলি. হারে ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

ফলের মাছি পাকা- এ পোকা কচি ফলে ছিদ্র করে এবং আক্রান্ত ফল পচে ঝরে যায়। আক্রান্ত ফল বিকৃত হয় । ঝিঙার অনুরূপ দমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

রোগ দমন

পাউডারি মিলডিউ - এ রোগের আক্রমণে পাতার উপরিভাগে সাদা পাউডারের ন্যায় আবরণ পড়ে। অনেক সময় গাছ মারা যায়। এর দমন- ঝিঙার অনুরূপ।

সেচ ও নিকাশ- চিচিংগা জলাবদ্ধতা ও স্যাঁতসেঁতে অবস্থা সহ্য করতে পারে না, তাই উঁচু আইল চওড়া দেখে নির্বাচন করতে হয়। মাদার সার প্রয়োগের পর পানি সেচ দিতে হয়।

ফসল সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ- চিচিংগার গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং বীজ রোপণের ২ মাসের মধ্যেই ফল ধারণ করে। শাস নরম ও কচি থাকা অবস্থায় সংগ্রহ করতে হয়। একবার ফল ধরা শুরু করলে প্রায় দেড়মাস ধরে ফল সংগ্রহ করা যায়। চিচিংগা জমি হতে উঠানোর পর ২ দিন পর্যন্ত সঙ্গীৰ থাকে। চিচিংগা গাছে বয়স্ক হলে ফেটে ফেটে যায়। সবজি সংগ্রহের সময় যাতে আঘাত না পায় সেজন্য পাটিকের বাক্স বা ছালার বস্তা ব্যবহার করা যায়। বাজারে নিতে সমস্যা বা বিলম্ব হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে ঠান্ডা বাতাসের সাহায্যে শীতশীকরণ করার জন্য পানিতে ডুবিয়ে বা বায়ুশূন্য ঘরে রাখার পর পানি ছিটিয়ে দিতে হয়। উপরে খড়ের ছাউনি এবং বাঁশ/পাট- ফির বেড়া দিয়ে ঘর তৈরি করে মাঝে মাঝে তার দেয়াল ও ছাদ পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিয়ে সে ঘরে ২/১ দিন রাখা যায়, কেননা তাতে ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ঠাণ্ডা হয় ।

ফলন- হেক্টর প্রতি ১৫-২০ টন সবজি হয়।

পটল চাষ

পটলের জাত: ফলের আকার, আকৃতির ও রঙ এর ওপর ভিত্তি করে পটলের অনেক ভাত পাওয়া যায়। সুনির্দিষ্টভাবে পটলের জাত বাছাই করা না হলেও অঞ্চলভেদে অনেক জাত চাষ হয়ে থাকে। যেমন- কাজলী, সাদা খলি, দামুড়া, বাউই ঝাঁক, খুলি, বোম্বাই, মুর্শিদাবাদী, বালি, কানাইবাশী ইত্যাদি ।

জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ

জমি তৈরি- দোঁআশ মাটি ও জমি বিশেষভাবে সুনিষ্কাশিত করে তৈরি করতে হয়। পটল চাষের জন্য উঁচু জমির প্রয়োজন। তবে চরাঞ্চলেও এর চাষ করা যায়। জমি ৪/৫টি চাষ ও মই দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হয়। জমি চাষের পর ১.৫ মিটার চওড়া করে বেড তৈরি করতে হয়। প্রতি বেডের মাঝখান দিয়ে ১৫-২০ সেমি. গভীর করে নালা কেটে ঐ নালার মধ্যে পটলের বীজ (লতা/গেঁড়) রোপণ করতে হয়। প্রতি দুই বেডের মাঝখান দিতে প্রায় ৩০ সেমি. চওড়া করে নালা রাখতে হয়, যাতে ঐ বৃষ্টি বা সেচের পানি বের হয়ে যেতে পারে। পটলের জমি ২ ভাবে তৈরি করা হয়। যেমন-মাটিতে লতানো এবং মাচাতে গাছের জন্য বেড দুই ধরনের করা হয়। মাটিতে লতানো গাছের জন্য পটলের লতা রোপণের জন্য একটানা লম্বা নালা তৈরি করা হয়। আর মাচার জন্য বেডের মাঝে নির্দিষ্ট দূরত্বে মাদা তৈরি করা হয়।

সার প্রয়োগ- পটলের জমি নরম ও আগাছামুক্ত রাখা দরকার। তবে নরম রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণ জৈব সার ব্যবহার করতে হয়। এজন্য হেক্টর প্রতি ৯-১০ টন গোবর সার বা কম্পাষ্টে সার, ১৭০-১৮৫ কেজি খৈল, ৮০ ১০০ কেজি ইউরিয়া, ১২০-১৫০ কেজি টিএসপি এবং ৪০-৫০ কেজি এমওপি সার দেয়া যেতে পারে। ইউরিয়া ও এমওপি সার বাদে অন্যগুলো মৌল সার হিসেবে শেষ চাষের সাথে সম্পূর্ণ জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। চারা গজাননার পর যখন ৬০-৯০ সেমি. বা লতা হবে তখন ৫০% ইউরিয়া ও এমওপি সার ছিটিয়ে দিয়ে মাটি আগলা করে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর লতা যখন মাচায় উঠায়ে দেওয়া হবে বা তার নিচে খড় বিচালি বিছানাতে হবে সে কী ৫০% ইউরিয়া ও এমওপি সার ২য় উপরিপ্রয়োগ হিসেবে দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। এছাড়াও জিপসাম ৬০ কেজি, দত্তা ৮ কেজি ও বারেণ সার ২-৩ কেজি জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করা হলে ভাল ফল পাওয়া যায়। ইউরিয়া ও এমওপি সারের ১ম ও ২য় উপরিপ্রয়োগ বেডে সারির বা মাদার পাশে মাটিতে প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

চারা রোপণ অন্তবর্তী পরিচর্যা

চাষের সময়ঃ অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত যে কোনো সময় পটল লাগানো যায়। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে লাগানো গাছ থেকে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ফসল সংগ্রহ শুরু করা যায়। মার্চে লাগানো গাছে জুনের পূর্বে ফল আসে। তবে কয়েক দফায় গাছ লাগালে সারা বছরই পটল পাওয়া যায়।

রোপণঃ পটল চাষে ২৬০ সেমি. চওড়া বেড় করে ২০০ সেমি. দূরে দূরে সারি করতে হয়। দুই বেডের মাঝখানে ৩০ সেমি. চওড়া ও ২০ সেমি. গভীর করে নালা তৈরি করতে হয়। অক্টোবর হতে নভেম্বর মাসে লতা ফেব্রুয়ারি মাসে শিকড় ও বীজতলায় কাটিং রোপণ করা যেতে পারে, যা থেকে ফেব্রুয়ারি হতে অক্টোবর মাস পর্যন্ত পটল উৎপাদন হয় । সাধারণত ১৫-২০ সেন্টিমিটার গভীর করে ভেলি খনন করে তাতে প্রায় ৫০-৬০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে গাছ রোপণ করা হয়। রোপণের জন্য ব্যবহৃত গাছ তিন প্রকারের যথা- ক. শেঁকড়, খ, লতা ও গ. লতার গোছা।

রোপণের সময়ঃ শিকড়ের একদিকের অগ্রভাগ মাটির বাইরে রেখে গোড়ার অংশ খননকৃত ভেলি বা গভীর নালাতে। এরপর অগ্রভাগ খড় বা বিচালি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। প্রায় দুই সপ্তাহ পর সাকার বের হয়। রোপণের জন্য প্রস্তুতকৃত লতাগুলোকে একত্রে জড়িয়ে গাছো বাঁধা হয়। কোনো কোনো লতা অফলন্ত থেকে যায়। লক্ষ রাখতে হয় যেন লতা সংগ্রহের সময় ফলন্ত গাছ চারা হতে সংগ্রহ করা হয়।

অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা

বাংলাদেশে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই আগাম ফসল করতে হলে সেচের প্রয়োজন। তবে ফসলের চাহিদা বুঝে সেচ দিতে হয়। পটল একটি লতানো উদ্ভিদ। বাউনি দিলে গাছের ফলনশীলতা বেশি হয়। কিন্তু পটল মাটির উপরে যেয়েও খুব ভালো ফলন দিতে পারে। এজন্য বাউনির পরিবর্তে মাটির উপরে খড়, আখের শুকনো পাতা অথবা কচুরিপানা বিছিয়ে দেয়া যায়। এতে উৎপাদন খরচ অনেক কম হয় ।

পটল বীজ গাছের অসুবিধা

ক. বীজের অঙ্কুরণ অনিয়মিত। 

খ. বীজের পাছের মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগ পুরুষ জাতের হয়। 

গ. আসল বীজের গাছ থেকে ফল পেতে অনেক বেশি সময় লাগে ।

পটলের বংশবিস্তারের জন্য কান্ডাংশসহ কন্দাল মূল অনেক সময় ব্যবহৃত হয়। কাজের শাখা (করম) থেকেও নতুন গাছ পাওয়া যায়। ১২০ থেকে ১৫০ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারি করে সারিতে ১ মিটার পর পর চারা রোপণ করা হয়। সুষ্ঠু পরাগায়নের জন্য ক্ষেতে ১০% পুরুষ জাতের গাছ লাগাতে হয়।

মুড়ি বা রেটুন ফসলঃ একবার ফল দেয়ার পর দীর্ঘজীবী উদ্ভিদ বা এগুলোর গুড়িচারা যথাস্থানে রেখে দিয়ে দ্বিতীয়বার যে ফসল নেয়া হয় তাকে রেটুন ফসল বলা হয়। পটলের গাছও ফল দেয়ার পর মারা যায় বা কাঞ্চ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। প্রথমবারের ফসল সংগ্রহের পর কাণ্ড কেটে ফেলে দিলে কিছুদনি পর কন্দমূল থেকে নতুন কান্ড বের হয়। সঠিকভাবে যত্ন নিলে এ রেটুন ফসল থেকেও ভালো ফলন পাওয়া যায় ।

পোকামাকড় ও রোগ দমন

পোকামাকড় দমন- লালপোকাঃ এ পোকা পাতা খায় ও পাতা ছিদ্র করে।

কাঁঠালে পোকা- এ পোকা পাতার সবুজ অংশ খেয়ে জালির ন্যায় তৈরি করে। সেডিন, নেক্সিয়ন, ডায়াজিনন ৬০ ইসির যে কোন একটি ১-১.২ মিলি লিটার বিষ ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।

উইপোকা : এ পোকা মাটিতে বাস করে। গাছের মাথা বা লতা বা গেঁড় খেয়ে গাছের ভীষণ ক্ষতি করে। কার্বোফুরান ৩/৫ জি ১০-১২ কেজি হারে প্রতি হেক্টর জমিতে ছিটিয়ে কোপারে মাটির সাথে মিশিয়ে দিলে উইপোকা দমন হয়।

রোগ দমন পাউডারি মিলভিউঃ এ রোগ কাণ্ডে ও পাতায় সাদা দাগ সৃষ্টি করে। ফলে আস্তে আস্তে এ রোগে আক্রান্ত গাছ মারা যায়। থিয়োভিট, রিডোমিল বা কপার মিশ্রিত ছত্রাকনাশক ৩ - ৩.৫ কেজি ৬০০-৭০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি হেক্টর জমিতে স্প্রে করে এ রোগ দমন করা যায়।

সেচ ও নিকাশঃ পটলের চারা গজানোর পর হালকা সেচ দিলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়। তবে সেচের পর মাটির চটা ভেঙে দিতে হয়। পটল দাঁড়ানো পানি সহ্য করতে পারে না। কিন্তু উষ্ণ ও আর্দ্র অবস্থায় পটল ভালো হয় । পটলের জমিতে ১ দিন পানি দাঁড়ানো থাকলেই সমস্ত গাছ ও গাছের পাতা লালচে হয়ে মারা যায় । তাই সেচ বা বৃষ্টি পানি যাতে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য ভাল নিকাশ ব্যবস্থা করতে হয়।

ফসল সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ

ফসল সংগ্রহঃ ফুলের পরাগায়নের সপ্তাহ খানেকের পটলের ফল সগ্রহের উপযোগী হয়। কাঁচা ফল সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে আন্ত:জেলা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পটল একটি উল্লেখযাগ্যে পণ্য। এজন্য দূরে চালান দিতে হলে মধ্যম পরিপক্ক ফল পাঠানাইে উত্তম। তবে চটের ব্যাগে করে ঠান্ডা অবস্থায় প্রেরণ করা শ্রেয়। পটল চাপ খেলে দ্রুত লাল হয়ে নষ্ট হয়ে যায়।

ফলনঃ হেক্টর প্রতি ৮-১৫ টন পটল জন্মে থাকে। একই পটলের গাছ দুই তিন বৎসর পর্যন্ত ফল প্রদান করে থাকে। যদি রেটুন ফসল হিসেবে পরিচর্যা করে চাষ করা হয়।

করলার চাষ

বাংলাদেশে বৃহাদাকার ও সবুজ বর্ণের গজ করলা চাষ হচ্ছে। কিছুটা লম্বা ও বোঁটার দিক সরু এবং বাকানো আকৃতির করলা যা কাঠবিড়ালী নামে প্রচলিত। দেশি ও ভারতীয় অনেকগুলো জাত চাষ হচ্ছে। যেমন দেশি জাত: হীরা ৩০৪ এফ-১, হীরক এফ-১, মানিক এফ-১, মনি এফ-১, গুডবয়, জাম্বো, গজ করলা, হারমুনি, প্রাইফ এফ-১ ইত্যাদি। ভারতীয় জাত: পুষা দু মৌসুমী, কয়েমেটর, হোয়াইট লং, কালিয়ানপুর প্রভৃতি।

জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ

জমি তৈরি: করলা বেলে দোঁআশ, পলিদোঁআশ ও দোঁআশ মাটিতে ভালো জন্মে। জমি চাষ ও মই দিয়ে পরিপাটি করে দুই মিটার চওড়া করে বেড় তৈরি করতে হয়। পরে বেডের উপর ১ মিটার ব্যবধানে জোড়া সারি করে ১ মিটার পর পর মাদা তৈরি করে মাদায় সার প্রয়োগ করতে হয়।

প্রতিবার সারের উপরিপ্রয়োগ করার সময় মাটি খুঁচিয়ে সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়।

সারের উপরিপ্রয়োগঃ গাছের অঙ্গজ বৃদ্ধির সাথে সাথে তার খাদ্য চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। খাদ্যের অভাবে ফুল-ফল উৎপাদন কম হয়। সাধারণত ইউরিয়া এবং এমওপি সার গাছের অঙ্গজ বৃদ্ধি শুরু হলে পার্শ্ব প্রয়োগের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়।

ক. গাছের খাদ্য ঘাটতি পূরণ হয়। 

খ. জৈব পদার্থকে পঁচনে সহায়তা করে। 

গ. গাছের দৈহিক বৃদ্ধি ভালো হয়। 

ঘ. মাটির পুষ্টি ভারসাম্য বজায় থাকে। 

ঙ. ফলন বেশি হয়।

চারা রোপণ ও অন্তবর্তী পরিচর্যা

বীজ বপনের হারঃ প্রতি মাদায় ৩-৪টি বীজ রোপণ করতে হয়। মাদায় দুই বা এক সারি পদ্ধতিতে করলা চাষ করা হয়। এক্ষেত্রে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ১ মিটার।

সাধারণত দুই সময়ে বীজ বপন করা যায়। জানুয়ারি-মার্চ মাস এবং অক্টোবর-ডিসেম্বর মাস।

বীজ বপন পদ্ধতিঃ সার প্রয়োগের ৭-১০ দিন পর প্রতি মাদায় বা উঁচু জায়গায় গর্ত তৈরি করে ৩-৪টি করে বীজ বপন করতে হয়। করলা বীজের বীজত্বক খুব পুরু বিধায় বপনের পূর্বে ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে নিতে হয়। এতে বীজের অঙ্কুরোদগম সহজ হয়। মাদায় গর্তে ২ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ রোপণ করতে হয়। তবে করলা বীজ ৮ ১০ দিনে গজায়।

গাছ পাতলাকারণঃ বীজ গজানোর পর চারা ৮-১০ সেন্টিমিটার লম্বার হলে প্রতি মাদায় বা গর্তে ১টি করে সুস্থ-সবল চারা রেখে বাকি চারা উঠায়ে ফেলতে হয়।

মাটি আগলাকরণঃ মাদার মাটি শক্ত হয়ে গেলে তা নিড়ানির সাহায্যে নরম ও ঝুরঝুরে করে দিতে হয়।

শূন্যস্থান পূরণঃ মাদায় চারা রোপণের পর কখনো কখনো সবজির চারা কিছু কিছু মারা যায়। অনেক সময় বপনকৃত বীজ গজায় না। সেসব শূন্যস্থানে নতুন করে সেই একই জাতের, একই বয়সের চারা লাগানো বা বীজ বপন করতে হয়। এজন্য চারা রোপণের সময়ই মাদার মধ্যে কিছু কিছু অতিরিক্ত চারা রাখতে হয়, যাতে সেসব চারা দিয়ে শূণ্যস্থান পূরণ করা যায়। সাধারণত চারা রোপণের ৭-৮দিনের মধ্যে এ কাজ করা উচিত। 

শূন্যস্থান পূরণের উপকারিতা

ক. জমিমাদার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়, 

খ. আগাছা কম হয়, 

গ. উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, 

ঘ. সারের সদ্বব্যবহার হয়।

খুঁটি বা বাউনি দেয়াঃ লতানো ফসল চাষাবাদের ক্ষেত্রে গাছের অঙ্গজ বৃদ্ধির সময় খুটি বা বাউনি দেওয়া প্রয়োজন। খুঁটি বা বাউনি না দিলে গাছের আজ বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এছাড়া গাছ মাটিতে নুয়ে পড়ে। বাঁশ, কঞ্চি পাটকাঠি, ধৈঞ্চা ইত্যাদি দিয়ে এ কাজ করা হয়। এ ছাড়া মাদায় পাতলা করে ধৈঞ্চা গাছ জন্মিয়ে সেগুলোকেও খুটি বা বাউনি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

খুটি বা বাউনির উপকারিতা

ক. গাছের অঙ্গজ বৃদ্ধি ভালো হয়, 

খ. গাছ পচনের হাত থেকে রক্ষা পায়, 

গ. অন্যান্য পরিচর্যা এবং ফসল সংগ্রহ, 

ঘ. গাছ পরিমিত আলো বাতাস পায়,

ঙ. গাছকে দাঁড়িয়ে থাকতে সহায়তা করে, 

চ. ফলন বেশি হয়, 

ছ. গাছ খুঁটি বা বাউনি বেয়ে উপরের দিকে উঠতে পারে।

মাচা দেয়াঃ লতানো ফসল মাটির উপরে মুক্তভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। এ সব ফসল মাটিতে থাকলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায়, গাছ ও ফল পঁচে যেতে পারে। এসব গাছ মাটির উপরে কোনো অবলম্বন পেলে তাতে খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠে। এজন্য লতানো প্রকৃতির ফসল চাষাবাদ করতে হলে বাঁশ, কঞ্চি, পাটকাঠি, ধৈঞ্চা দিয়ে মাচা তৈরি করে দিতে হয়।

মাচা দেয়ার উপকিরিতা 

ক. গাছ সহজে বৃদ্ধি পায়, 

খ. ফলন বেশি হয়, 

গ. গবাদি পশু সহজে গাছ নষ্ট করতে পারে না, 

ঘ. গাছের ফল নষ্ট হয় না, 

ঙ. ফসলের অন্যান্য পরিচর্যার সুবিধা হয়, 

চ. আইলের সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়।

ছাঁটাইকরণঃ ফসলের অঙ্গজ বৃদ্ধি বেশি হয়ে গেলে ফল উৎপাদন কম হয়। এজন্য গাছের দৈহিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ ও ফলায়নকে উৎসাহিত করার জন্য অতিরিক্ত শাখা-প্রশাখা কেটে দিতে হয়। এছাড়া রোগ ও পোকা আক্রান্ত ডাল পালা, লতা-পাতা কেটে গাছ ছাঁটাই করে দিতে হয়।

পরাগায়নকরণঃ কুমড়া গোত্রের অধিকাংশ সবজির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, গাছে স্ত্রী ফুল ফোটার কিছুদিন পর ফল পচে যায় বা ঝরে যায়। পোকা ও মৌমাছির অনুপস্থিতিতে পরাগায়ন না হওয়ার ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। তাই কৃত্রিম উপায়ে এসব ফসলের পরাগায়ন করা দরকার। ফল ধারনের জন্য হাত দিয়ে ফুলের পরাগায়ন করতে হয়। সকালের অথবা বিকেলের দিকে একটি সদ্য ফোটা পুরুষ ফুল নিয়ে পুংকেশর ঠিক রেখে পাঁপড়িগুলো ছিড়ে ফেলতে হয়। তারপর সেই পুংকেশর দিয়ে স্ত্রী ফুলের গর্ভকেশরের উপর আলতাভোবে কোমলভাবে ২-৩ বার ছুয়ে দিলেই পরাগায়নের কাজ হয়। এভাবে একটি পুরুষ ফুল দিয়ে ৮-১০টি স্ত্রী ফুলের পরাগায়ন করা যায় ৷ পরাগায়ন করা হলে দেখা যায় যে গাছে 

ক. ফল নষ্ট হয় না; 

খ. বেশি ফল পাওয়া যায়। 

ফল পাতলাকরণ করা হলে দেখা যায় যে গাছ- 

ক. পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো-বাতাস পায়, 

খ. গাছের খাদ্যোপাদানের ঘাটতি হয় না, 

গ. ফলের বৃদ্ধি ভালো হয়, 

ঘ. ফলের আকার-আকৃতি সঠিক থাকে, 

ঙ. ফলন ভালো হয় এবং 

চ. রোগবালাই কম হয়।

পোঁকা মাকড় ও রোগ দমন

পোকাদমনঃ সকালের দিকে বালাইনাশক স্প্রে করলে সবজিতে পরাগায়ন ব্যাহত হয় বিধায় সকালের দিকে স্প্রে করা উচিত নয়। ফলের মাজরা পোকা ও পোকার কাঁড়া ফল ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে শাঁস বা ফল খেয়ে নষ্ট করে দেয়। এর ফলে বিভিন্ন প্রকার ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত হয়ে ফলগুলো পঁচিয়ে দেয় ।

ফলের মাছি পোকাঃ পূর্ণকাক্ষ পোকা হুল ফুটিয়ে যাকল বা হালের নিচে বা ভিতরে ডিম পাড়ে। মাছি কীড়াগুলো ডিম ফুটে বের হয়ে ফলের নরম অংশ খেয়ে ফল নষ্ট করে দেয়।

বিছাপোকাঃ এ পোকার কীড়া গাছের পাতার সবুজ অংশ খেয়ে কেবল শিরা রেখে দেয়। গাছ দুর্বল হয় ও ফলন কমে যায়।

ইপিলাকনা বিটল : পূর্ণবয়স্ক পোকা এবং প্রাব পাতার সবুজ অংশ খেয়ে পাতাকে ঝাঝরা করে ফেলে। পাতা জালির ন্যায় হয় এবং শুকিয়ে মারা যায়। 

জাবপোকাঃ এ পোকা গাছের কচি পা ও পাতার রস চুষে ক্ষতি করে।

রোগ দমন

পাউডারি মিলডিউঃ এ রোগের আক্রমণে পাতা সাদা বা ধূসর বর্ণের পাউডার যারা ঢেকে যায় এবং পাতা নষ্ট হয়ে। গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে, ফুল ও ফল কমে যায়।

ডাউনি মিলডিউ : এ রোগের আক্রমণের ফলে পাতার নিচে ধূসর বেগুনি বর্ণের দাগ দেখা যায়। উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় এ রোগ ছড়ায়। রোগের বেশি আক্রমণে গাছ মরে যায়। এ জাতীয় পোকা ও রোগ দমনে অন্যান্য সবজি চাষে উল্লেখ করা হয়েছে।

সেচ ও নিকাশ- করলা উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশে ভাল জন্মে। কিন্তু জলাবদ্ধতায় তাড়াতাড়ি পাছ মারা যায়। ফুল আসার সময় বৃষ্টিপাত হলে ফল ধরা ব্যাহত হয়। চারার বাড়ন্ত অবস্থায় সেচের উপকারিতা বেশি দেখা যায়। কেননা এতে পাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। করলার জমিতে যাতে কোনভাবেই সেচের বা বৃষ্টির পানি দাঁড়াতে না পারে সেজন্য ভালো নিকাশ ব্যবস্থা করতে হয়।

ফসল সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ

বীজ বপনের ৫০-৬০ দিন পর থেকে ফসল সংগ্রহ শুরু করা যায় এবং মাস দুয়েক অব্যাহত থাকে। বীজ শক্ত হওয়ার পূর্বেই ফসল সংগ্রহ করা উচিত। হেক্টরে ৫-৭ টন করলা সংগ্রহ করা যায় ।

ছালার বস্তা, বাঁশের ঝুড়ি, কাগজের বাক্স ইত্যাদিতে প্যাকেটজাত করে ২০-৩০ কেজি ওজনের মধ্যে রাখা উচিত। তবে প্যাকেটে ভর্তি করার আগে পরিষ্কার করে, ছোট বড় বাছাই করে, আকার আকৃতি ও রং দেখে নিতে হয়। প্যাকেট পরিবহণের সময় নিচে ও পাশে খড়ের স্তর বিছিয়ে নিতে হবে এবং প্যাকেট সাজানোর সময় স্তুপ না করে উপর দিয়ে ভর নেয়ার জন্য সাপোর্ট দিতে হয়। বাজারের দূরত্ব কাছাকাছি হলে মাথায় বা কাধে বা সাইকেলে করে বহন করা যায় ।

Content added || updated By

এক কথায় উত্তর 

১. চৈতালী ঝিঙা বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে চাষ হয় ? 

২. ঝিঙা উঠানোর পর কতদিন রাখলে স্বাভাবিক রঙ নষ্ট হয়ে যায়? 

৩. বীজ রোপণের কতদিনের মধ্যে চিচিংগার ফল ধারণ করে ? 

৪. পটল চাষের জন্য জমি কয়ভাগে তৈরি করা যায়? 

৫. পটলের বীজের গাছে শতকরা কতভাগ পুরুষ জাতের গাছ হয় ? 

৬. পটল চাষে ব্যবহৃত গাছ কত প্রকারের হয়?

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 

১. পটল চাষে বীজ ব্যবহারের সমস্যা ও মুড়ি ফসল সম্পর্কে ব্যাখ্যা কর। 

২. ঝিঙা চাষে পোকা ও রোগ দমন সম্পর্কে বর্ণনা কর। 

৩. চিচিঙা চাষে জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ সম্পর্কে বর্ণনা কর। 

৪. পটল চাষে সার প্রয়োগ ও চারা রোপণ এবং অন্তবর্তী পরিচর্যা সম্পর্কে আলোচনা কর। 

৫. করলা চাষে শূন্যস্থান পূরণ ও বাউনি দেয়া সম্পর্কে ব্যাখ্যা দাও । 

রচনামূলক প্রশ্ন 

১. পটল চাষে সার প্রয়োগ, রোপণ কৌশল ও পোকামাকড় দমন সম্পর্কে বর্ণনা কর। 

২. করলা চাষে চারা রোপণ ও অন্তবর্তী পরিচর্যা, পোকামাকড় ও রোগ দমন এবং ফসল সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণ সম্পর্কে বর্ণনা কর।

Content added By
Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.