SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ২য় পত্র | NCTB BOOK

একটি ইঞ্জিন তাতে প্রদত্ত বা শোষিত তাপশক্তির কত অংশ কাজে রূপান্তরিত করতে পারে, ইঞ্জিনের দক্ষতা বা কর্মদক্ষতা বা তাপীয় দক্ষতা দ্বারা তাই বোঝায় । 

কোনো তাপ ইঞ্জিন যারা কাজে রূপান্তরিত তাপ শক্তির পরিমাণ এবং ইঞ্জিন দ্বারা শোষিত তাপশক্তির পরিমাণের অনুপাতকে ইঞ্জিনের দক্ষতা বলে।

সুতরাং ইঞ্জিনের দক্ষতা, η =ইঞ্জিন দ্বারা কাজে রূপান্তরিত তাপশক্তি/ইঞ্জিন দ্বারা শোষিত তাপশক্তি

কোনো ইঞ্জিন যদি T1; তাপমাত্রায় তাপ উৎস থেকে Q1 তাপ শোষণ করে T2 তাপমাত্রায় Q2 তাপ বর্জন করে, তাহলে ইঞ্জিন দ্বারা কাজে রূপান্তরিত তাপশক্তির পরিমাণ

W= Q1 - Q2

η=WQ1 

η=Q1 -Q2Q1 

η=1-Q2Q1..(1.28)

তাপীয় ইঞ্জিনের বেলায় ইঞ্জিন দ্বারা শোষিত বা বর্জিত তাপ Q ইঞ্জিনের সংস্পর্শে থাকা তাপ উৎস বা তাপাধারের তাপমাত্রা T এর সমানুপাতিক অর্থাৎ, QT ধ্রুব সংখ্যা। কাজেই তাপীয় ইঞ্জিনের একটি পূর্ণচক্রের জন্য আমরা পাই,

Q2Q1=T2T1..(1.29)

সুতরাং ( 1.28) সমীকরণ থেকে কার্নো ইঞ্জিনের দক্ষতা পাওয়া যাবে,

η=T1-T2T1..(1.30)

দক্ষতাকে সাধারণত শতকরা হিসাবে প্রকাশ করা হয়।

η=T1-T2T1×100%.   (1.31)

তাপীয় ইঞ্জিনের কর্ম দক্ষতার সমীকরণ (1.31 ) হতে দেখা যায় যে, ইঞ্জিনের কর্ম দক্ষতা কেবলমাত্র তাপ উৎস এবং তাপ গ্রাহকের তাপমাত্রা T1 ও T2 এর ওপর নির্ভর করে— কার্যনির্বাহী বস্তুর প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে না। এই সমীকরণ থেকে আরো দেখা যায় যে, যে কোনো দুটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রার মধ্যে কার্যরত সকল প্রত্যাবর্তী ইঞ্জিনের দক্ষতা সমান হবে।

(1.31) সমীকরণে যেহেতু T1 > (T1 – T2), কাজেই ইঞ্জিনের দক্ষতা কখনোই 100% হতে পারে না। তাপ উৎস এবং তাপগ্রাহকের মধ্যবর্তী তাপমাত্রার পার্থক্য যত বেশি হবে ইঞ্জিনের দক্ষতাও তত বৃদ্ধি পাবে ।

১.১৩। রেফ্রিজারেটর (Refrigerator)

রেফ্রিজারেটর ইদানিং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য উপাদান। বিশেষ করে শহুরে জীবনে রেফ্রিজারেটর ছাড়া এক দিনও চলে না। সংক্ষেপে একে বলা হয় ফ্রিজ। ফ্রিজে খাদ্যবস্তু বা অন্যান্য পচনশীল দ্রব্য যেমন মাছ, মাংস, কাঁচা ও রান্না করা তরিতরকারি এবং জীবন রক্ষাকারী ওষুধপত্র ইতাদি নিম্ন তামাত্রায় দীর্ঘ দিন সংরক্ষণ করা যায়। এ তাপমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া খাদ্যবস্তু বা অন্যান্য সামগ্রী পচিয়ে ফেলতে পারে না। ফলে অনেক দিন টাটকা ও ভালো থাকে।

রেফ্রিজারেটরের মধ্য থেকে বিশেষ উপায়ে তাপ শক্তিকে বের করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ফলে এর মধ্যে কক্ষ তাপমাত্রা থেকে অনেক নিম্ন ( 0°C থেকে কম) তাপমাত্রা সৃষ্টি হয়। আমরা জানি প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে তাপ সবসময় উচ্চতর উষ্ণতার বস্তু থেকে শীতলতর বস্তুতে সঞ্চালিত হয়। উল্টোটি সাধারণত ঘটে না, অর্থাৎ শীতল বস্তু থেকে তাপ উষ্ণ বস্তুতে যায় না। উল্টোটি ঘটাতে হলে অর্থাৎ কোনো শীতল বস্তু থেকে তাপ উষ্ণ বস্তুতে সঞ্চালিত করতে হলে যান্ত্রিক শক্তি ব্যয় করতে হয়। এ ব্যবস্থাকে বলে তাপ পাম্প (Heat pump )।

চিত্র :১.৮ তাপ পাম্পের মূলনীতি

(১) বাস্পীভবন কুণ্ডলী (২) সম্প্রসারক ভালব (৩) ঘনীভবন কুণ্ডলী (৪) সংকোচন পাম্প বা কম্প্রেসার

  মূলনীতি :

  ১.৮ চিত্রে তাপ পাম্পের মূলনীতি দেখানো হলো। একটি বাষ্পীভবন কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে ঠাণ্ডা তরল প্রবাহিত করা হয়। এই তরল পারিপার্শ্বিক থেকে তাপ গ্রহণ করে উত্তপ্ত হয়। অতঃপর তরলকে একটি সম্প্রসারক ভালবের মধ্য দিয়ে উচ্চ চাপে প্রবাহিত করে সম্প্রসারিত হতে দিলে তা বাষ্পে পরিণত হয়। এই বাষ্প ঘনীভবন কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় পরিবেশে তাপ বর্জন করে ঠাণ্ডা হয়। এরপর এই ঠাণ্ডা বাষ্পকে কম্প্রেসারের মধ্যে প্রবল চাপে সংকুচিত করে তরলে রূপান্তরিত করে পুনরায় বাষ্পীভবন কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে চালনা করা হয়।

কম্প্রেসার চালনায় এবং বাষ্পীভবন কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে তরল পদার্থ প্রবাহিত করার জন্য যান্ত্রিক শক্তি কাজে লাগানো হয়। রেফ্রিজারেটরেও এভাবে যান্ত্রিক শক্তি ব্যয় করে তাপ শক্তি বের করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। নিচে রেফ্রিজারেটরের গঠন ও কার্যনীতি বর্ণনা করা হলো।

গঠন: 

রেফ্রিজারেটরের প্রধান অংশ একটি আয়তাকার শীতলীকরণ প্রকোষ্ঠ (চিত্র ১.৯)। যার চারদিকে তাপ সুপরিবাহী ধাতব নলের কুণ্ডলী পেঁচানো থাকে। কুণ্ডলীটির এক প্রাপ্ত রেফিজারেটরের নিচে রক্ষিত একটি কম্প্রেসারের অন্তর্গামী প্রান্তের সাথে এবং অন্য প্রান্ত একটি সম্প্রসারক ভালবের মাধ্যমে দ্বিতীয় একটি নল কুণ্ডলীর সাথে যুক্ত থাকে।

দ্বিতীয় নল কুণ্ডলীটিকে ঘনীভবন কুণ্ডলী বলে। এটি রেফ্রিজারেটরের পেছনে একটি ফিনসের উপর বসানো থাকে এবং কুণ্ডলীর নলের শেষ প্রান্ত একটি সংকোচন পাম্প বা কম্প্রেসারের বহির্গামী প্রান্তের সঙ্গে যুক্ত থাকে ।

চিত্র : ১.৯ রেফ্রিজারেটরের গঠন ও কার্যপ্রণালী

উভয় কুণ্ডলীর নলের মধ্য দিয়ে বিশেষ ধরনের শীতায়ক (refrigerent) পদার্থ চালনা করা হয়। শীতায়ক পদার্থটির বৈশিষ্ট্য হলো উচ্চ চাপে নলের মধ্য দিয়ে চালিত হলে পরিবেশ থেকে তাপ শোষণ করে এবং দ্রুত বাষ্পে পরিণত হতে পারে। কম্প্রেসারটি একটি বৈদ্যুতিক পাম্প দ্বারা চালানো হয়।

কার্যপ্রণালি : 

কম্প্রেসারটি চালু করলে বাষ্পীভবন কুণ্ডলীর মধ্যে চাপ কমে যাওয়ায় শীতায়ক তরল দ্রুত বাষ্পীভূত হয়। এজন্য সুপ্ত তাপ প্রয়োজন হয়। শীতলীকরণ প্রকোষ্ঠ বা রেফ্রিজারেটরের মধ্যে রক্ষিত বস্তু থেকে এই সুপ্ততাপ শোষণ করে তরল শীতায়ক বাষ্পে বা গ্যাসে পরিণত হয়। ফলে প্রকোষ্ঠের ভেতরে নিম্ন তাপমাত্রা সৃষ্টি হয়।

গ্যাসীয় শীতায়ক পদার্থ কম্প্রেসার বা সংকোচন পাম্পের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। পাম্প উচ্চ চাপে শীতায়ক গ্যাসকে সংকুচিত করে ঘনীভবন কুণ্ডলীতে চালনা করে। বাইরে উন্মুক্ত এই কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে (ফ্রিজের পেছনে পাখার উপর এ ধরনের কুণ্ডলী দেখা যায়) উচ্চ চাপের সংকুচিত গ্যাস প্রবাহিত হয়। বাইরের বায়ুমণ্ডলে তাপ বর্জন করে এবং তরল হয়। এই তরল পুনরায় বাষ্পীভবন কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এভাবে যতোক্ষণ কম্প্রেসারটি চালু থাকে ঘনীভবন এবং বাষ্পায়ন চক্রটিও ক্রমাগত চলতে থাকে। ফলে ফ্রিজের মধ্যে নিম্ন তাপমাত্রা বজায় থাকে। শীতলীকরণ প্রকোষ্ঠ প্রয়োজনের বেশি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে কম্প্রেসারটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিতে হয়। এজন্য রেফ্রিজারেটরের মধ্যে একটি স্বয়ংক্রিয় সুইচ থাকে। যাকে বলা হয় থার্মোস্ট্যাট। তাপমাত্রা কমে গেলে সুইচটি আপনাআপনি চালু হয় ।

Content added || updated By