SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলা সাহিত্য - কবিতা | NCTB BOOK

আজগুবি নয়, আজগুবি নয়, সত্যিকারের কথা

ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হলো ব্যথা!

ছায়া ধরার ব্যবসা করি তাও জানো না বুঝি ?

রোদের ছায়া, চাঁদের ছায়া, হরেক রকম পুঁজি।

শিশির ভেজা সদ্য ছায়া, সকাল বেলায় তাজা,

গ্রীষ্মকালে শুকনো ছায়া ভীষণ রোদে ভাজা ।

চিলগুলো যায় দুপুর বেলায় আকাশ পথে ঘুরে

ফাঁদ ফেলে তার ছায়ার উপর খাঁচায় রাখি পুরে।

কাগের ছায়া বগের ছায়া দেখছি কত ঘেঁটে -

হাল্কা মেঘের পানসে ছায়া তাও দেখেছি চেটে ।

কেউ জানে না এসব কথা কেউ বোঝে না কিছু,

কেউ ঘোরে না আমার মতো ছায়ার পিছু পিছু।

তোমরা ভাবো গাছের ছায়া অমনি লুটায় ভুঁয়ে,

অমনি শুধু ঘুমায় বুঝি শান্ত মতন শুয়ে;

আসল ব্যাপার জানবে যদি আমার কথা শোনো

বলছি যা তা সত্যি কথা, সন্দেহ নাই কোনো।

কেউ যবে তার রয় না কাছে, দেখতে নাহি পায়,

গাছের ছায়া ছটফটিয়ে এদিক ওদিক চায় ।

সেই সময়ে গুড়গুড়িয়ে পিছন হতে এসে

ধামায় চেপে ধপাস করে ধরবে তারে ঠেসে ।

পাতলা ছায়া, ফোকলা ছায়া, ছায়া গভীর কালো-

গাছের চেয়ে গাছের ছায়া সব রকমেই ভালো ৷

গাছগাছালি শেকড় বাকল সুদ্ধ সবাই গেলে,

বাপরে বলে পালায় ব্যামো ছায়ার ওষুধ খেলে ।

নিমের ছায়া ঝিঙের ছায়া তিক্ত ছায়ার পাক

যেই খাবে ভাই অঘোর ঘুমে ডাকবে তাহার নাক ।

চাঁদের আলোয় পেঁপের ছায়া ধরতে যদি পারো,

শুঁকলে পরে সর্দিকাশি থাকবে না আর কারো ।

আমড়া গাছের নোংরা ছায়া কামড়ে যদি খায়

ল্যাংড়া লোকের ঠ্যাং গজাবে সন্দেহ নাই তায় ।

আষাঢ় মাসের বাদলা দিনে বাঁচতে যদি চাও,

তেঁতুলতলার তপ্ত ছায়া হপ্তা তিনেক খাও ।

মৌয়া গাছের মিষ্টি ছায়া ‘ব্লটিং’ দিয়ে শুষে

ধুয়ে মুছে সাবধানেতে রাখছি ঘরে পুষে !

পাক্কা নতুন টাটকা ওষুধ এক্কেবারে দিশি-

দাম করেছি শস্তা বড়, চোদ্দ আনা শিশি ।

Content added By

শিশু-কিশোর পাঠকদের কাছে সুকুমার রায় একটি প্রিয় নাম। তাঁর আবোল-তাবোল, হ-য-ব-র-ল প্রভৃতি অতুলনীয় রচনার জন্য তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। সুকুমার রায় বিখ্যাত শিশু-সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর পুত্র এবং বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও শিশু সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের পিতা। সুকুমার রায়ের জন্ম ময়মনসিংহ জেলার মাশুয়া গ্রামে ১৮৮৭ সালের ৩০শে অক্টোবর। সুকুমার ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি একদিকে বিজ্ঞান, ফটোগ্রাফি ও মুদ্রণ প্রকৌশলে উচ্চশিক্ষা নিয়েছিলেন, অন্যদিকে ছড়া রচনা ও ছবি আঁকায় মৌলিক প্রতিভা ও উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথের সঙ্গে গোড়ায় গলদ নাটকে অভিনয়ও করেছিলেন তিনি। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এক অদ্ভুত ক্লাব। নাম 'ননসেন্স ক্লাব'। এই ক্লাবের পত্রিকার নাম ছিল সাড়ে বত্রিশ ভাজা। তাঁর রচনাগুলোও অদ্ভুত ও মজাদার। হাঁসজারু, বকচ্ছপ, সিংহরিণ, হাতিমি ইত্যাদি কাল্পনিক প্রাণীর নাম তাঁরই সৃষ্টি। বিখ্যাত সন্দেশ পত্রিকাটি সম্পাদনা করেছেন সুকুমার রায়। আর একে কেন্দ্র করেই ঐ সময় সুকুমার রায়ের সাহিত্য প্রতিভা পূর্ণ বিকশিত হয়েছিল। সুকুমার রায় বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন প্রধানত খেয়াল রসের কবিতা, হাসির গল্প, নাটক ইত্যাদি শিশুতোষ রচনার জন্য। ছেলেবুড়ো সবাই তাঁর লেখা পড়ে আনন্দ পায়। সুকুমার রায়ের মৃত্যু হয় ১৯২৩ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর।

Content added By

আজগুবি- অদ্ভুত, অপূর্ব, অবিশ্বাস্য, বানানো। গাত্রে — গায়ে, শরীরে। ভুঁয়ে- ভূমিতে, মাটিতে। অঘোর— অচেতন, বেহুশ। হপ্তা – সপ্তাহ মৌয়া- মহুয়া গাছ, ব্লটিং— চোষ কাগজ

 

Content added By

সুকুমার রায়ের ‘ছায়াবাজি' ছড়া-কবিতাটি আবোল তাবোল থেকে সংকলন করা হয়েছে। তার ছড়ার অদ্ভুত জগতের মতো এখানেও অনেক আজগুবি কথা বলেছেন। যদিও তিনি বলছেন তা মোটেও আজগুবি নয়। তবুও কবির কথা বিশ্বাস হতে চায় না। সত্যি, ছায়ার সঙ্গে কি কুস্তি করা যায়? কবি বলছেন, রোদের ছায়া, চাঁদের ছায়া, বকের ছায়া, চিলের ছায়া, হাল্কা মেঘের পাসে ছায়া, শুকনো ছায়া, ভেজা ছায়া-এ রকম অসংখ্য ছায়া ধরে তিনি ব্যবসা ফেঁদেছেন। এই ছায়াবাজি বা ছায়ার ব্যবসা অবাস্তব নিশ্চয়। এই ছায়াগুলো অসুখেরও মহৌষধ! অনিদ্রা দূর করতে নিম ও ঝিঙের ছায়া; সর্দিকাশি সারাতে চাঁদের আলোয় পেঁপের ছায়া; পঙ্গু লোকের নতুন করে পা জন্মাতে আমড়ার নোংরা ছায়া যদি খাওয়া যায় তা হলে এর কোনো তুলনা নেই ! কবি তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছায়া যত্নের সঙ্গে তুলে রাখেন; কিছু সর্বসাধারণের কল্যাণার্থে নির্ধারিত মূল্যে বিতরণের জন্য রাখেন। আসলে এটি একটি রূপক কবিতা। ছায়া এখানে শিল্পের অমরাত্মা হিসেবে বিবেচিত। চটুল ভাব ও পণ্ডশ্রমের ভেতরেও যে জীবনের গভীর সত্য নিহিত থাকতে পারে কবিতায় তা-ই প্রতিভাত হয়েছে।

Content added By
Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.