SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ২য় পত্র | NCTB BOOK

দুটি কুণ্ডলী P ও S বিবেচনা করা যাক। এদের পরস্পরের কাছাকাছি রাখা হয়েছে। P কুণ্ডলীর সাথে সংযুক্ত রয়েছে একটি ব্যাটারি E ও একটি টেপা চাবি K এবং S কুণ্ডলীর সাথে সংযুক্ত রয়েছে একটি গ্যালভানোমিটার G [চিত্র 5.10]। P কুণ্ডলীকে বলা হয় প্রাথমিক বা মুখ্য কুণ্ডলী এবং S কুণ্ডলীকে বলা হয় গৌণ কুণ্ডলী। মুখ্য কুণ্ডলী P এর K চাবিতে চাপ দিলে, গৌণ কুণ্ডলী S এর গ্যালভানোমিটার G এর কাঁটার বিক্ষেপ ঘটে। চাবির চাপ ছেড়ে দিলে গ্যালভানোমিটারের কাঁটার বিক্ষেপ ঘটে বিপরীত দিকে। পারস্পরিক আবেশের জন্য এরূপ হয় ।

চিত্র :৫.১০

K চাবিতে চাপ দিলে P কুণ্ডলীতে তড়িৎ প্রবাহ শূন্য থেকে বৃদ্ধি পেয়ে সর্বোচ্চ মানে পৌঁছায় । তড়িৎ প্রবাহের এই বৃদ্ধির সময় কুণ্ডলী P তে চৌম্বক ফ্লাক্স তৈরি হতে থাকে। গৌণ কুণ্ডলী S মুখ্য কুণ্ডলী P-এর খুব কাছাকাছি থাকায় S কুণ্ডলীর সাথে জড়িত চৌম্বক ফ্লাক্সও বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে গৌণ কুণ্ডলী S এ আবিষ্ট প্রবাহ উৎপন্ন হয়। গৌণ কুণ্ডলী S এর আবিষ্ট প্রবাহের অভিমুখ এ রকম হয় যে এটি মুখ্য কুণ্ডলী P এর ব্যাটারির প্রবাহের বৃদ্ধিকে বাধা দেয়। গ্যালভানোমিটারের বিক্ষেপ ঘটে গৌণ কুণ্ডলীতে আবিষ্ট প্রবাহ উৎপন্ন হওয়ার ফলে। 

   কোনো একটি কুণ্ডলীতে তড়িৎ প্রবাহ পরিবর্তন করলে নিকটবর্তী অন্য একটি কুণ্ডলীতে যে তাড়িতচৌম্বক আবেশ সৃষ্টি হয় তাকে পারস্পরিক আবেশ বলে।

 

পারস্পরিক আবেশ গুণাঙ্ক

কোনো মুখ্য কুণ্ডলীতে I তড়িৎ প্রবাহের জন্য গৌণ কুণ্ডলীতে সংযুক্ত চৌম্বক ফ্লাক্স যদি ϕ হয় তাহলে,

φI

বা, φ=MI

    এখানে, M সমানুপাতিক ধ্রুবক। একে পারস্পরিক আবেশ গুণাঙ্ক বলে। I = I একক হলে,  φ = M হয়। 

   কোনো মুখ্য কুণ্ডলীতে একক তড়িৎ প্রবাহের জন্য গৌণ কুণ্ডলীতে সংযুক্ত চৌম্বক ফ্লাক্সকে পারস্পরিক আবেশ গুণাঙ্ক বলে।

ε=-dφdt=-ddt

=-MdIdt 

এখানে dIdtহলো ঐ নির্দিষ্ট মুহূর্তে P কুণ্ডলীর প্রবাহের পরিবর্তনের হার। বিয়োগ চিহ্ন দিয়ে আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তির প্রতিরোধী প্রকৃতি বোঝানো হচ্ছে।

   অর্থাৎ কোনো মুখ্য কুণ্ডলীতে তড়িৎপ্রবাহ একক হারে পরিবর্তিত হলে গৌণ কুণ্ডলীতে যে আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি উৎপন্ন হয় তাকে পারস্পরিক আবেশ গুণাঙ্ক বলে।

পারস্পরিক আবেশ গুণাঙ্কের এককও হেনরি (H)

পারস্পরিক আবেশের ব্যবহার

রূপান্তরক বা ট্রান্সফর্মার

সংজ্ঞা : যে যন্ত্রের সাহায্যে পর্যাবৃত্ত বা দিক পরিবর্তী উচ্চ বিভবকে নিম্ন বিভবে এবং নিম্ন বিভবকে উচ্চ বিভবে রূপান্তরিত করা যায় তাকে রূপান্তরক বা ট্রান্সফর্মার বলে। তড়িতচৌম্বক আবেশের উপর ভিত্তি করে এই যন্ত্র তৈরি করা হয়। ট্রান্সফর্মার সাধারণত দু প্রকারের হয়। যথা-

১. আরোহী বা স্টেপ আপ ট্রান্সফর্মার ও 

২. অবরোহী বা স্টেপ ডাউন ট্রান্সফর্মার।

   যে ট্রান্সফর্মার অল্প বিভবের অধিক তড়িৎ প্রবাহকে অধিক বিভবের অল্প তড়িৎপ্রবাহে রূপান্তরিত করে তাকে আরোহী বা স্টেপ আপ ট্রান্সফর্মার বলে। আর যে ট্রান্সফর্মার অধিক বিভবের অল্প তড়িৎপ্রবাহকে অল্প বিভবের অধিক তড়িৎপ্রবাহে রূপান্তরিত করে তাকে অবরোহী বা স্টেপ ডাউন ট্রান্সফর্মার বলে।

গঠন : 

  একটি কাঁচা লোহার আয়তাকার মজ্জা বা কোর বা অন্তর্বস্তুর দুই বিপরীত বাহুতে অস্তরিত তার পেঁচিয়ে ট্রান্সফর্মার তৈরি করা হয় [চিত্র ৫.১১]। অন্তর্বস্তুর যে বাহুর কুণ্ডলীতে পরিবর্তী প্রবাহ বা বিভব প্রয়োগ করা হয় তাকে মুখ্য কুগুলী বলে আর যে কুণ্ডলীতে পর্যাবৃত্ত বা পরিবর্তী বিভব আবিষ্ট হয় তাকে গৌণ কুণ্ডলী বলে। আরোহী ট্রান্সফর্মারের মুখ্য কুণ্ডলীর চেয়ে গৌণ কুণ্ডলীতে পাক সংখ্যা বেশি থাকে। আর অবরোহী ট্রান্সফর্মারে মুখ্য কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা গৌণ কুণ্ডলীর চেয়ে বেশি থাকে।

চিত্র :৫.১১

ধরা যাক, মুখ্য কুণ্ডলীতে εp পরবর্তী বিভব প্রয়োগ Ep করার ফলে এই কুণ্ডলীতে Ip, প্রবাহ পাওয়া গেল । এই প্রবাহ অন্তর্বস্তুকে চুম্বকিত করে চৌম্বক ক্ষেত্ররেখা উৎপন্ন করে যা মুখ্য কুণ্ডলীতে একটি আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি উৎপন্ন করে। এখন মুখ্য কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা Np এবং প্রতি পাকে সংযুক্ত চৌম্বক ফ্লাক্স φ হলে,

εp=-Npdφdt… (5.12)

এখানে dφ /dt = মুখ্য কুণ্ডলীতে চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তনের হার। চৌম্বক ফ্লাক্সের যদি কোনো ক্ষরণ না হয় তাহলে গৌণ কুণ্ডলীর প্রতি পাকেও একই ফ্লাক্স সংযুক্ত হবে ফলে গৌণ কুণ্ডলীতেও তড়িচ্চালক শক্তি আবিষ্ট হবে। গৌণ কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা Ns এবং গৌণ কুণ্ডলীতে আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি Es হলে,

εp=-Nsdφdt.. (5.13)

(5.12) ও (5.13), সমীকরণ থেকে,

εpεs=NpNs

অর্থাৎ কুণ্ডলীদ্বয়ের তড়িচ্চালক শক্তি এদের পাক সংখ্যার সমানুপাতিক।

এখন শক্তির নিত্যতা সূত্রানুসারে ট্রান্সফর্মারের উভয় কুণ্ডলীর ক্ষমতা সমান হবে অর্থাৎ মুখ্য কুণ্ডলীতে প্রতি সেকেন্ডে ব্যয়িত শক্তি গৌণ কুণ্ডলীতে প্রতি সেকেন্ডে উৎপন্ন শক্তির সমান হবে। অর্থাৎ অন্তর্গামী ক্ষমতা = বহির্গামী ক্ষমতা

:- εplp εsls

যখন, Ns > Np,তখন  εp> ६ অর্থাৎ ট্রান্সফর্মারটি আরোহী বা স্টেপ-আপ। আবার যখন, Np > Ns. তখন Ep> Es এক্ষেত্রে ট্রান্সফর্মারটি অবরোহী বা স্টেপ ডাউন ।

Content added || updated By

আরও দেখুন...