SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ | NCTB BOOK

এই অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা নিচের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবে

  • পৃথিবী ও মহাবিশ্ব
  • বিগ ব্যাং ও মহাবিশ্বের প্রসারণ
  • গ্যালাক্সি ও নক্ষত্র: কাঠামো ও উপকাঠামো
  • নক্ষত্রমণ্ডলী; কালপুরুষ ও সপ্তর্ষি পর্যবেক্ষণ 
  • মহাকাশ নিয়ে প্রচলিত কুসংস্কার: জ্যোতিষবিদ্যা

 

মহাবিশ্বের সৃষ্টি

মহাবিশ্বের গঠন

তোমাদের নিশ্চয়ই জানার কৌতূহল হয়—এই মহাবিশ্ব কত বড়। মজার বিষয় হচ্ছে মহাবিশ্ব কিন্তু ক্রমাগত বড় হচ্ছে এবং পৃথিবীর মানুষ তার পুরোটুকু কখনো দেখতে পারবে না। তারা যেটুকু দেখতে পায় সেটি এত বড় যে সেটাকে বর্ণনা করার জন্য বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, আলোকে তার একমাথা থেকে। অন্যমাথায় যেতে একশ বিলিয়ন (দশ হাজার কোটি) বছর লেগে যাবে। এই মহাবিশ্বে অসংখ্য নক্ষত্র কিন্তু সেগুলো আলাদা আলাদা সমানভাবে ছড়িয়ে থাকে না, সেগুলো থাকে বিশাল বিশাল গ্যালাক্সির মাঝে। গ্যালাক্সি হচ্ছে অসংখ্য নক্ষত্রের সমষ্টি, মহাকর্ষ বলের কারণে গ্যালাক্সির ভেতর নক্ষত্রগুলো আঁটকে থাকে। মহাবিশ্বে এই গ্যালাক্সি গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এবং একটি গ্যালাক্সি অন্য গ্যালাক্সি থেকে অনেক দূরে দূরে থাকে। মহাবিশ্বকে আমরা যদি একটা অনেক বড় মহাসমুদ্র হিসেবে কল্পনা করি তাহলে গ্যালাক্সিগুলো হবে বহুদূরে দূরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট দ্বীপের মতো। অনুমান করা হয় দৃশ্যমান মহাবিশ্বে প্রায় এক ট্রিলিয়ন (লক্ষ কোটি) গ্যালাক্সি আছে যার প্রত্যেকটিতে প্রায় এক বিলিয়ন (একশ কোটি) নক্ষত্র!

 

আমাদের গ্যালাক্সি

তোমরা সবাই জানো সূর্য একটা নক্ষত্র, কাজেই সেটাও আসলে একটা গ্যালাক্সির মাঝে আছে। সেটি হচ্ছে আমাদের গ্যালাক্সি, এবং আমাদের এই গ্যালাক্সির নাম ছায়াপথ (Milky Way)। বেশিরভাগ গ্যালাক্সির আকার একটি থালার মতো, সূর্য এই গ্যালাক্সির কিনারার দিকে, তাই আমরা রাতের আকাশের দিকে তাকালে গ্যালাক্সির অসংখ্য তারাকে সাদা ধোঁয়ার মতো দেখতে পাই। তোমরা যারা এখনও রাতের আকাশের এই ছায়াপথ দেখে নি তারা শহর থেকে দূরে গিয়ে যখন রাতের আকাশে চাঁদ থাকবে না, তখন অবশ্যই এই ছায়াপথটি দেখে আসবে।

আমরা আমাদের গ্যালাক্সির ভিতর থাকি বলে এটা দেখতে পাই না, দেখতে কেমন হবে সেটা শুধু অনুমান করতে পারি। কিন্তু যদি আমরা শরৎকালে বা শীতকালে আকাশের দিকে তাকাই তাহলে আমাদের গ্যালাক্সির সবচেয়ে কাছের গ্যালাক্সি এন্ড্রোমিডাকে দেখতে পাই। যদি আমরা টেলিস্কোপে দিয়ে মহাকাশের আরও গভীরে তাকাই তাহলে দেখব আরও গ্যালাক্সি- মনে হবে গ্যালাক্সির বুঝি শেষ নেই।

 

বিগ ব্যাংয়ের অনেক খুঁটিনাটি আছে, তোমরা যখন বড় হবে তখন সেগুলো ধীরে ধীরে জানবে। আপাতত জেনে রাখো বিগ ব্যাংয়ের পর বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে প্রথমে ছিল শুধু শক্তি এবং ধীরে ধীরে সেখানে নানা ধরনের কণা তৈরি হতে থাকে। প্রথমে তৈরি হয় সবচেয়ে সহজ পরমাণু, যেটার নাম হচ্ছে হাইড্রোজেন।

তোমরা শুনে অবাক হবে, এই সময়টিতে পুরো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কিন্তু ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড আলোকিত হয়ে উঠে যখন সেখানে নক্ষত্রের জন্ম হতে শুরু করে।

 

নক্ষত্রের জন্ম

নক্ষত্র জীবিত প্রাণী নয়, তারপরেও আমরা কিন্তু নক্ষত্রের জন্য জন্ম এবং মৃত্যু এই দুইটি শব্দ ব্যবহার করি। কারণ সত্যি সত্যি নক্ষত্রের জন্ম হয়, তার একটি খুবই ঘটনাবহুল জীবন থাকে, এবং তারপরে এক সময় নক্ষত্রের মৃত্যু হয়।

তোমাদের একটু আগে বলা হয়েছে বিগ ব্যাংয়ের পর বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে প্রথমে ছিল শক্তি এবং তারপর তৈরি হয়েছে হাইড্রোজেন। এই হাইড্রোজেন কোথাও কোথাও একত্রিত হয়ে একটা গ্যাস পিণ্ডের আকার নেয়, এই গ্যাস পিওকে বলে নেবুলা। সেই নেবুলাতে যদি যথেষ্ট গ্যাস থাকে তাহলে মহাকর্ষ বলের কারণে যখন সংকুচিত হতে থাকে তখন তার তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে এতই বেড়ে যাওয়া সম্ভব যে তখন ভেতনের হাইড্রোজেন একটি অন্যটার সাথে নিউক্লিয়ার ফিউসান নামে একটি বিক্রি করে প্রচুর শক্তি জন্ম দিতে থাকে। সেই নক্ষত্র থেকে আলো বের হতে থাকে, এবং আমরা বলি নক্ষত্রের জন্ম হয়েছে। পাঁচ বিলিয়ন (পাঁচশ কোটি) বছর আগে আমদের সূর্য ঠিক এইভাবে জন্ম নিয়েছিল। আরও পাঁচ বিলিয়ন বছর সূর্য এইভাবে আলো দিবে তারপর একসময় যখন তার হাইড্রোজেন জ্বালানি শেষ হয়ে যাবে সেটি ফুলে ফেঁপে নিষ্প্রভ হয়ে (যে রূপটাকে বলে রেড জায়ান্ট) মৃত্যুবরণ করবে, আলোহীন নিষ্প্রভ নক্ষত্রের এই অবশেষকে বলা হয় হোয়াইট ডোয়ার্ফ। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বেশিরভাগ নক্ষত্রের জীবন এরকম।

 

নক্ষত্র মন্ডলী 

তোমরা যদি রাতের অন্ধকার আকাশের দিকে তাকাও তাহলে সেখানে অসংখ্য নক্ষত্রকে দেখবে, কোনো কোনোটা জ্বলজ্বল করছে, আবার কোনো কোনোটা মিটমিট করছে। শুধু তাই নয়, তুমি সেগুলোর মাঝে রঙের বৈচিত্র্যও দেখতে পাবে। তোমার যদি কল্পনা শক্তি থাকে, নিশ্চিতভাবেই তুমি সেই নক্ষত্রগুলো। দিয়ে কোনো একটা ছবি কল্পনা করে নিতে পারবো সেই প্রাচীন কাল থেকেই অনেক ধরনের কল্পনা করে অনেক ধরনের পৌরাণিক কাহিনীর ছবি কল্পনা করা হয়েছে, তোমাদের সেরকম কয়েকটি ছবি দেখানো হলো।

নক্ষত্রমণ্ডলী যেহেতু আমাদের সৌরজগৎ থেকে অনেক দূরে তাই আকাশের কোথায় কখন দেখা যাবে তার পরিবর্তন হলেও তাদের আকারের পরিবর্তন হয় না। একটি নক্ষত্রকে আকাশে খুঁজে পাওয়া কঠিন হলেও কয়েকটি নক্ষত্র মিলে যখন একটি বিশেষ আকার তৈরি করে তখন সেটি বেশ সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। কাজেই আকাশে নক্ষত্রের একটা ম্যাপ তৈরি করার জন্য নক্ষত্রমণ্ডলীকে ব্যবহার করে আকাশকে বারো ভাগে ভাগ করা হয়েছে— নক্ষত্রমণ্ডলীর সাথে একটা করে ছবি কল্পনা করে তাদেরকে সেরকম নামও দেয়া হয়েছে। (ছবিতে তোমাদের সেরকম উদাহরণ দেখানো হলো) জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আকাশের এই বিভাজনকে ব্যবহার করেন।
তোমরা জেনে নিশ্চয়ই অবাক হাবে আমাদের বাংলা মাসগুলো এই নক্ষত্রমণ্ডলীর উদয়ের সাথে সম্পর্ক রেখে তৈরি করা হয়েছে। পৃথিবীর খুব বেশি জাতির নিজস্ব ক্যালেন্ডার নেই, আমাদের আছে। শুধু তাই নয়, সেটি আমদের প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আকাশের নক্ষত্রমণীর সাথে মিলিয়ে করেছেন, সেটি নিয়ে তোমরা গর্ব করতে পারো!

 

জ্যোতির্বিদ্যা 


এবারে তোমরা জানবে, কীভাবে বিজ্ঞানের একটা বিষয়কে কুসংস্কারের জন্য ব্যবহার করা হয়। তোমাদের যে কয়েকটি নক্ষত্রমণ্ডলীর কথা বলা হয়েছে, তোমরা সবাই নিশ্চয়ই কখনো না কখনো সেগুলোর নাম শুনেছ, কারণ ভাগ্য গণনার জন্য এই নক্ষত্রমণ্ডলীকে ব্যবহার করা হয়। শুভ সময় এবং অশুভ সময় নির্ণয় করার জন্যও এগুলো ব্যবহার করা হয়।

জ্যোতিষিচর্চার জন্য জন্মক্ষণে কোন নক্ষত্রমণ্ডলীর উদিত হচ্ছিল—সেটি দিয়ে একজনের রাশি নির্ণয় করা হয়। তারপর এগুলোর অবস্থান ব্যবহার করে বিভিন্ন মানুষের ভাগ্য নির্ণয় করা হয়। পৃথিবীর বিলিয়ন (আটশত কোটি) মানুষের ভাগা মাত্র বারোটি ভাগে ভাগ করা যায়—এটি কী বিশ্বাসযোগা হতে পারে? দুঃখের কথা হচ্ছে, দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পত্রপত্রিকা এই রাশিচক্র দিয়ে ভাগ্য নির্ণয় বর্ণনা করে থাকে। তাদের সবার উচিত শুরুতে ঘোষণা দেওয়া যে, এই পদ্ধতিতে ভাগা নির্ণয়ের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
 

 

Content added By